• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ১২:১৯ পূর্বাহ্ন

শহর পুলিশ ফাঁড়ির অভিযানে ক্লুলেস হত্যা মামলার মূল আসামী গ্রেফতার

Md Nazim Uddin / ৪৩ ভিউ টাইম
আপডেট : বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২

দীর্ঘ সতের মাস পর কক্সবাজার জেলার সদর থানাধীন বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় (মেডিপ্লাস পেস্ট) কোম্পানীতে কর্মরত ভিকটিম আনোয়ার (৩৫) কে ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম করে হত্যা করার মূল আসামী সুজন মল্লিক (২৩)কে গ্রেফতার করলো কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ি।

মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত মূল আসামী সুজন মল্লিক (২৩)কে গত ২১/০৩/২০২২ইং, রাত অনুমান ০৮.৩০ ঘটিকার সময় বিজিবি ক্যাম্প এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে মল্লিক পাড়া বিনতের ঘোনা এলাকার স্বপন মল্লিকের ছেলে।

মামলার সুত্রে জানা যায়, আনােয়ার হােছাইন(৩৬) গত ২২/১১/২০২০ইং তারিখ সকাল অনুমান ৭.৩০ ঘটিকার সময় তাহার চাকুরীরত কাজে টেকনাফ যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বাহির হয় এবং ঐদিন সন্ধ্যা অনুমান ৭.১৫ ঘটিকার সময় ঘটনাস্থল কক্সবাজার সদর থানাধীন কক্সবাজার পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক সংলগ্ন বিএডিসি অফিসের দ্বিতীয় গেইটের সামনে কালভার্টের পূর্ব পার্শে রাস্তার উপর জনৈক পথচারীদ্বয়-সহ আরাে কিছু পথচারী বাদীর ভাইকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখম অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকিতে দেখিয়া তাহাকে মুমূর্ষ অবস্থায় দ্রুত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ঐদিন রাত অনুমান ০৮.১৫ ঘটিকার সময় আনােয়ার হােছাইনকে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘােষণা করেন।

উক্ত ঘটনায় মৃত আনোয়ারের ছোট ভাই আতোয়ার হোসাইন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন আসামীর বিরুদ্ধে কক্সবাজার জেলার সদর থানার মামলা নং-৬৩ তারিখ-২৩/১১/২০২০ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৪ দন্ড বিধি, জিআর নং-৮৬৯/২০২০ দায়ের করেন। তিনি ধারণা করেন গত ২২/১১/২০২০খ্রিঃ বিকাল অনুমান ০৫.২০ ঘটিকা হতে অনুমান ০৭.৩০ ঘটিকার মধ্যে যেকোন সময় ভিকটিম আনোয়ারকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে ফেলে চলে যায়।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন পুলিশ পরিদর্শক নিঃ, ইনচার্জ শহর পুলিশ ফাঁড়ি, কক্সবাজার এর উপর ন্যস্ত করেন ও তিনি মামলাটির তদন্ত শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে মামলার ঘটনাস্থল কক্সবাজার জেলার সদর থানাধীন বিজিবি ক্যাম্প, মল্লিকপাড়া, সিকদার পাড়া, বড়ুয়া পাড়া, লাহার পারা, ইসলামাবাদ, সাহিত্যিকা পল্লী, পল্ল্যাইনাকাটা ও আশপাশ এলাকায় ছদ্মবেশ ধারণ করে, ছিনতাইয়ের সহিত জড়িত লোকজনের তথ্য ও তথ্য-প্রযুক্তি সহায়তায় তদন্তকারী কর্মকর্তা উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদেরকে সনাক্ত করেন। মামলার ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামীদেরকে গ্রেফতার করার জন্য বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করেন। এই মামলাটি একটি ক্লুলেস মামলা এবং মামলার এজাহারনামীয় আসামী অজ্ঞাতনামা। বিধায় মামলা সংক্রান্তে কোন নির্দোষ ব্যক্তি হয়রানী না হয় এবং প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতার এর জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। অতঃপর আসামী সুজন মল্লিক (২৩)কে গত ২১/০৩/২০২২খ্রিঃ রাত ০৮.৩০ ঘটিকায় বিজিবি ক্যাম্প এলাকা হতে গ্রেফতার করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী সুজন মল্লিক মামলার ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে এবং অপর আসামীর নাম সহ বিস্তারিত তথ্যাদি প্রকাশ করে। এরপর আসামী সুজন মল্লিক কে অদ্য ২২/০৩/২২খ্রিঃ তারিখে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে সে বিজ্ঞ আদালতে মামলার ঘটনার সাথে নিজেকে জড়িয়ে ও অপর আসামীর নাম প্রকাশ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে জানায় ঘটনার দিন সন্ধ্যা অনুমান ০৬.০০ ঘটিকার সময় সে ও অপর আসামি দুজনে গাঁজা(মাদক) সেবন করার পর তারা ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে এবং সেই উদ্দেশ্যে বিজিবি ক্যাম্প থেকে বিএডিসি অফিসের সামনের ফাঁকা রাস্তার দিকে কোমরে ০২ টি ধারালো ছোড়া নিয়ে অগ্রসর হয়। ভিকটিম আনোয়ার হোসেন বাস টার্মিনাল থেকে চৌধুরীপাড়া পায়ে হেঁটে আসতেছিল তার বাম হাতে কালো রংয়ের ব্যাগ ও একটি স্মার্ট ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তার পাশ দিয়ে আসতেছিলো।আসামিরা দুজনে ভিকটিমকে দেখে সিদ্ধান্ত নেয় মোবাইলটা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিবে। সেই উদ্দেশ্যে আসামি সুজন মল্লিক ও অজ্ঞাতনামা অপর আসামি তাদের হাতে থাকা ধারালো ছোরা দ্বারা ভিকটিমকে ভয়ভীতি দেখায় এবং বলে যে মোবাইল ও মানি ব্যাগ দিয়ে দিতে, ভিকটিম বলে যে আমার কাছে আমার অফিসের ফোন ও আমার মানি ব্যাগে ৭শত টাকা আছে। এটা নিয়ে নিলে বাকি মাসের ৭ দিন আমার বাচ্চা আমি আমার স্ত্রী না খেয়ে থাকবো। আমি আর আমার স্ত্রী না খেয়ে থাকলেও কষ্ট নাই কিন্তু বাচ্চাটা না খেয়ে থাকলে নির্ঘাত মারা যাবে। আমাকে দয়া করেন কিন্তু আসামিরা ভিকটিম আনোয়ার এর কাছ থেকে জোর করে মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনাইয়া নেবার চেষ্টা করলে সে বাধা দেয় এবং আসামি সুজন মল্লিক ও অপর আসামি নির্দয় হয়ে ভিকটিমের শরীরে উপযপুরী ছুরিকাঘাত করে কিন্তু শরীরে ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়েও আসামিরা মোবাইল ও মানিব্যাগ তার কাছ থেকে ছিনতাই করতে পারে নাই। গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় খালি হাতে কোম্পানির দেওয়া মোবাইল ও মানিব্যাগে রক্ষিত ৭০০টাকা বাচানোর জন্য আসামীদের সাথে লড়ে গেছেন। পরবর্তীতে আশপাশের লোকজন আসলে আসামীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। আশপাশের লোকজন তাকে গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, অপরাধী যত গোপণে অপরাধ করুক না কেন পাড় পাবে না। সে যেই হউক অপরাধ করে রেহাই পাবে না। ক্লুলেস হত্যা মামলাটা তারই প্রমাণ। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন আছে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামীদেরকেও গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ