• মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০০ পূর্বাহ্ন

প্রয়াত নির্মাতার গলা টিপে ধরতে চাইলেন শিলাজিৎ, জানা গেল নেপথ্যের কারণ

ডেক্স নিউজ / ১২১ ভিউ টাইম
আপডেট : রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪

কলকাটার বিনোদন অঙ্গনের পরিচিত মুখ শিলাজিৎ মজুমদার এবং ঋতুপর্ণ ঘোষ। শিলাজিৎ কেবল অভিনেতা নয় গায়ক ও গীতিকার হিসেবেও পরিচিত তিনি। অন্যদিকে ঋতুপর্ণ ছিলেন গুণী নির্মাতা। প্রয়াত ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে কাজ করেছিলেন শিলাজিৎ। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রয়াত ঋতুপর্ণকে রাগে গলা টিপে ধরার কথা বলেছেন। সেই থেকে শুরু হয়েছে এই দুই তারকাকে নিয়ে আলোচনা।

শিলাজিৎ মজুমদার কেন এমন বলছেন তার ব্যাখ্যা দিয়ে জানান, তখন ঋতুর আট থেকে দশ জন সহযোগী। তাদেরই একজন ঝুমদি (সুদেষ্ণা রায়) বললেন একবার দেখা করতে। নতুন ছেলে খুঁজছে। আমার ক্যাসেটের ছবি দেখিয়ে নাকি নাম প্রস্তাব করেছিলেন ঝুমদি। প্রথম দেখায় ঋতুপর্ণ অভিনেতার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছিল সেটা হজম করতে পারেননি ঋতুপর্ণ অভিনেতা বলেন, আমি গেলাম দেখা করতে। ঋতু দেখল, বলল ‘ওমা এ তো খুব সুন্দর দেখতে ।’ তার পর একটু উঠে দাঁড়াতে বলল। আমার খুব অস্বস্তি হল, যেন কনে দেখছে। তার পর বলল ‘ও মা তুমি তো বেশ লম্বাও।’ এর কী উত্তর দেওয়া উচিত, বুঝতে পারিনি। জিজ্ঞেস করল, ‘‘কখনও ডাবিং করেছ?’

গানের ডাবিং করেছি, সংলাপ নয়। তবে চেষ্টা করতে পারি। সেই সময় ‘দহন’-এর ডাবিং চলছে। জয়ন্ত দত্ত বর্মণের কিছু সংলাপ আমাকে দিয়ে বলানো হল। আমার গলাটাই রেখে দিয়েছিল ঋতু। তারপর আমাকে বলল, ‘একটা ছোট ছবি করব, তোমার রোলটা খুব ছোট, তুমি কি করবে?’ আমি রাজি হয়ে গেলাম, ছোট-বড় বলে কিছু হয় না। কিন্তু ‘অসুখ’-এ অভিনয়ের অভিজ্ঞতা আমার কাছে অদ্ভুত।

‘অসুখ’ সিনেমায় শিলাজিৎ মজুমদার অভিনয় করেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষের নির্দেশনায়। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে শিলাজিৎ বলেন, আমার চরিত্রের একটা চশমা ছিল। সেই চশমাটা প্রযোজনা সংস্থার। সামান্য পাওয়ার ছিল। তাই আমার একটু অসুবিধা হচ্ছিল। বেশিক্ষণ পরে থাকলে মাথা ধরে যাচ্ছিল। জিজ্ঞেস করেছিলাম, একটা শট কি চশমা ছাড়া দিতে পারি, বা শটের মধ্যে চশমাটা খুলতে পারি? ঋতু বলেছিল, ‘না চশমা সারা ক্ষণ পরে থাকতে হবে। চরিত্রটা এ রকমই। আর শটের মধ্যে চশমা খুলবে কেন, তুমি কি উত্তমকুমার নাকি।’

অভিনেতা আরও বলেন, চশমাটায় অসুবিধা হচ্ছিল বলে বার বার সাজঘরে গিয়ে চশমাটা খুলে রাখছিলাম। শটের সময় আবার পরে নিচ্ছিলাম। তবে ভুলে একটা শট চশমা ছাড়া দেই। চশমা ছাড়াই একটা দারুণ শট দিয়ে এসেছি। ঋতুর কাছে গিয়েই বলে ফেলছি কথাটা। ঋতু প্রচণ্ড চিৎকার করে উঠল। খুব বাজে প্রতিক্রিয়া দিল। তখন ফিল্মে শুট হত। ঋতু বলতে শুরু করল, ‘এটা অভিনেতার দায়িত্ব। ক্রম বজায় রাখা তোমার দায়িত্ব। সৌমিত্রদা এখনও এ সব দিকে খেয়াল রাখেন, তুমি কে’।

আমি অবাক হয়ে গিয়েছি্লাম, আমার সঙ্গে এইভাবে কথা বলছে। আমার ভাই, বাবা, মা কারও ক্ষমতা নেই আমার সঙ্গে এই ভাবে কথা বলার। পৃথিবীতে কোনও লোক আমার সঙ্গে ওই ভাবে কথা বললে আমি তার গলাটা টিপে ধরব। সিদ্ধান্ত নিলাম সিনেমাটা করব না। কিন্তু আমি চুপচাপ শুনে গেলাম। তারপর ঝুমদির কাছে গিয়ে বললাম, আমি ছবিটা করব না।

তবে অসুখ সিনেমাটি শেষ করেছিলেন শিলাজিৎ। ১৯৯৯ সালে সিনেমাটি মুক্তির পর প্রশংসা পেয়েছিলেন তিনি। তবে ক্যারিয়ারের শুরুতে এমন ধাক্কা মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। অন্যদিকে ঋতুপর্ণ ঘোষের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার ক্রিয়েটিভ আর্টিস্ট হিসেবে। ১৯৯২ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম সিনেমা হীরের আংটি। ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের অনুরাগী। দুই দশকের কর্মজীবনে তিনি বারোটি জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ৩০ মে কলকাতায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ