• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:৩৬ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তার হুমকি ‘আরসা’

চ্যানেল কক্স ডেস্ক / ১৭ ভিউ টাইম
আপডেট : বুধবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২১

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেই কক্সবাজারের উখিয়ার শিবিরে মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য নতুন করে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। মিয়ানমারে সীমাহীন নির্যাতিত, বঞ্চিত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যানারে জন্ম নেয়া আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) বা আল-ইয়াকিন এখন সেই রাজাকার আল-বদরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

প্রত্যাবাসনের পক্ষে সোচ্চার এই রোহিঙ্গা নেতার হত্যাকাণ্ডের মাস না পেরোতেই গত শুক্রবার উখিয়ায় আশ্রয়শিবিরে সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়ে খুন করা হয় ছয় রোহিঙ্গাকে। অভিযোগ উঠেছে, মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের মতো ছয় খুনেও মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (তারা আল ইয়াকিন নামেও পরিচিত) জড়িত।

মুহিবুল্লাহ খুনে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করাসহ আশ্রয় শিবিরের নিরাপত্তা জোরদারের দাবির মুখে ছয় খুনের ঘটনা ঘটল। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি প্রত্যাবাসন বিরোধী আরসার নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার দিকটিও স্পষ্ট হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়েও আলোচনা হচ্ছে। তবে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রকাশ্য রোহিঙ্গা শিবিরে আরসার উপস্থিতির বিষয়টি স্বীকার করা হয় না।

গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে উখিয়ার থাইনখালী (ক্যাম্প-১৮) আশ্রয়শিবিরের মসজিদ-মাদ্রাসায় হামলা চালিয়ে ছয় রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে আরসা সমর্থক অন্তত ২৫০ জন অংশ নেয় বলে উখিয়ার বিভিন্ন শিবিরের রোহিঙ্গা মাঝিরা (নেতা) জানিয়েছেন।

আর ছয় রোহিঙ্গাকে হত্যার ঘটনায় সোমবার ও মঙ্গলবার ৮ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এবং উখিয়া থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে এই মামলায় এক হেড মাঝিসহ এজাহার নামীয় পাঁচজনসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এদিকে মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম’ আয়োজিত ‘বিএসএফ সংলাপে’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বলপূর্বক রোহিঙ্গাদের যে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো, তার পেছনের কারণ আপনারা জানেন। আরসার (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) পেছনে কারা রয়েছে, তাও আপনারা জানেন। তবে আমরা চাই, রোহিঙ্গারা এখানে ভালো থাকুক। তারা দ্রুত তাদের দেশে ফিরে যাক।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,কক্সবাজারের ‘‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১ লাখ লোক বসবাস করছে। এটা বাড়তে বাড়তে এখন শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ‘আরসা’র কিছু যুবক নিয়মিত ঘোরাঘুরি করছে। রোহিঙ্গা নেতারা সব সময় বলেছেন, ‘আমরা ফিরে যেতে চাই।’

হত্যা, মারামারি, দখল, আধিপত্য বিস্তার, তার ওপরে মাদক ব্যবসা, যেটা আমি সব সময় বলি। তারা বর্ডার পার হয়ে দুর্গম এলাকায় চলে যায়, আবার ফিরে আসে। এর ভাগাভাগি সব মিলিয়ে সেখানে একটা অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যার জন্য আমরা পুলিশ, র‌্যাব, আনসার পাঠিয়েছি। আর্মির ওয়াচে রেখেছি তাদের। তারপরেও বিশৃঙ্খলা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরে পায়ে হাঁটার রাস্তাগুলোতে সহিংসতা ঘটে। নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে। যারা খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা তাদের আটকের চেষ্টা করছি। এখানে নানামুখী বিষয় রয়েছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।’ যারা পাঠিয়েছে তাদেরও ইন্ধন থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী এক লাখ রোহিঙ্গাদের পর্যায়ক্রমে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে, এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার জনকে নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তায় এখন বড় হুমকি ‘আরসা’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র বলছে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে অন্তত ৩০০ মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আরসার সহযোগী উলামা কাউন্সিল ও ইসলামি মাহাস নামে পরিচিত রোহিঙ্গাদের আরেকটি সংগঠনের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিভিন্ন শিবিরের মাঝিরা বলছেন, ইসলামি মাহাস আরসার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করার পাশাপাশি প্রত্যাবাসনের পক্ষে রোহিঙ্গাদের সংগঠিত করে আসছে। শিবিরে ইয়াবার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তার নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহ হত্যার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত শতাধিক সন্ত্রাসী ধরা পড়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৫২টি অস্ত্র। গ্রেপ্তার হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৫ জন আরসার সক্রিয় সদস্য বলে রোহিঙ্গা মাঝিরা জানান। তাঁরা বলছেন, মুহিবুল্লাহ হত্যার পর নিজেদের শক্তির জানান দিতে খুনখারাবির ঘটনা ঘটিয়ে আলোচনায় আসতে চাইছে আরসা।

রোহিঙ্গা শিবিরে সাম্প্রতিক অস্থিরতার বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোয় জড়িত দুষ্কৃতকারীরা রোহিঙ্গাদেরই একটি অংশ। নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘিরে একে অন্যের ওপর আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নানা রকম দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে।

মুহিবুল্লাহ হত্যার এক মাস না যেতেই ছয় রোহিঙ্গা খুনের বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা কখনো চাইব না আমাদের ভূখণ্ডে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটুক। সম্প্রতি মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনা দেশে-বিদেশে যথেষ্ট আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ডের পরপরই আমরা সেখানে নিরাপত্তা যথেষ্ট জোরদার করেছি। মুহিবুল্লাহ হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের আটকও করা হয়েছে। এর মধ্যে দুঃখজনকভাবে আরেকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। এটা আমাদের জন্য অস্বস্তির।’

স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে শিবিরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়ে জনবল বাড়ানোসহ সক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকের পর গত শনিবার কক্সবাজারের স্থানীয় প্রশাসনকে সমন্বয় জোরদারের পাশাপাশি কঠোরভাবে শিবিরের আইনশৃঙ্খলা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ