অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ফাঁকে মঙ্গলবার রাতে (নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে) এ বৈঠক শুরু হয়।
জাতিসংঘের সদর দপ্তরের নির্ধারিত সভাকক্ষে বৈঠকটি হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশন শুরু হয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার। এতে যোগ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁকে স্বাগত জানান জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ড. ইউনূস একটি গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার অন্তর্বর্তী সরকারের রূপকল্প উপস্থাপন করবেন যেখানে মানবাধিকার সমুন্নত থাকবে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই বড় পরিবর্তন এসেছে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে কাজ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জো বাইডেনের মধ্যকার বৈঠকটি দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার এবং ঢাকার প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থনের বার্তা পাবে বিশ্ব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে গেছে। আর এখন দীর্ঘ আড়াই দশক পরে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে ২০০০ সালে ঢাকা সফরে এসেছিলেন মার্কিন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। সেই সময় দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছিল। সেই সময় ক্লিনটনের ঢাকা সফরের পেছনেও অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিলেন ড. ইউনূস।
এ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট সোমবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে এটিই ড. ইউনূসের প্রথম বিদেশ সফর। এবারের সফরে বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া ছাড়াও জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেবেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাধারণত কারও সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন না। তাঁর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকগুলো মূলত ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়। তাই নিউইয়র্কে ড. ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং সেই সঙ্গে একটি বড় বার্তা। বার্তাটি সম্পর্ক গাঢ় করা এবং ঢাকার প্রতি সমর্থনের।
ইউনূস-বাইডেন বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের বৈঠকগুলোতে কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় না। বৈঠকগুলোতে নীতিনির্ধারকরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। বিস্তারিত আলোচনা কর্মকর্তা পর্যায়ে হয়ে থাকে, যে আলোচনাটি মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফরের সময় হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টা বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাইকমিশনার, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, ইউএসএইডের প্রশাসকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইতালির প্রেসিডেন্ট এবং কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের আলোচনাও চলছে। এ ছাড়া চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারেন।