• বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪১ পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান উত্তেজনা, উভয় সঙ্কটে ভারত

বার্তা কক্ষ / ২৬০ ভিউ টাইম
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৯
যুক্তরাষ্ট্র-ইরান উত্তেজনা, উভয় সঙ্কটে ভারত - এএফপি

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জেরে ইরান থেকে ভারত জ্বালানি তেল কেনা বন্ধ করার মাত্র কয়েকদিনের মাথাতেই ভারতে জরুরি সফর করে গেলেন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ। খবর বিবিসির।

মঙ্গলবার দুপুরে তিনি দিল্লিতে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সাথে বৈঠক সেরে তেহরান ফিরে গেছেন, তবে বৈঠকের পর এখনও কোনও দেশই কোনও বিবৃতি দেয়নি।

পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন, ভারত যাতে ইরান থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখে সে জন্য তেহরান দিল্লিকে চাপে রাখতে চাইছে – আর এ জন্য দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে চাবাহার বন্দরকে।

কিন্তু ইরান ইস্যু ভারতের জন্য কীভাবে জটিল এক কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে?

আসলে গত নভেম্বরে আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসন যখন নতুন করে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপায়, তখন ভারত-সহ আটটি দেশকে ইরান থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে সাময়িক ছাড় দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু চলতি মে মাসের গোড়ায় সেই অব্যাহতির মেয়াদও ফুরিয়েছে, আর এই পরিস্থিতি ভারত ও ইরান দুই দেশকেই বেজায় সমস্যায় ফেলে দিয়েছে।

দিল্লিতে শীর্ষস্থানীয় ইরান-বিশেষজ্ঞ কামার আগা বিবিসিকে বলছিলেন, “বস্তুত ইরান ভীষণভাবে চায় ভারত তাদের থেকে আগের মতো তেল কেনা বজায় রাখুক – কিন্তু ভারতের সমস্যা হল তাদের ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ সাঙ্ঘাতিক।”

‘নানা কারণে সামনে জাতিসংঘ, ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স ইত্যাদি ফোরামে আমেরিকার সমর্থন ভারতের জন্য ভীষণ জরুরি।’

‘ভারত বরাবর বলে থাকে তাদের পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণ স্বাধীন – এখন ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমি বলব ভারতের সেই পররাষ্ট্রনীতিই এক কঠিন পরীক্ষায় পড়েছে’, বলছেন মি আঘা।

এই পটভূমিতেই সোমবার রাতে দিল্লিতে এসে নামেন ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ – গত চার মাসের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার।

‘রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক ক্ষেত্রে’ ভারতকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বলে বর্ণনা করে জারিফ খোলাখুলি জানান, নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি উঠে যাওয়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতেই তার দিল্লি আসা’।

ভারতের জন্যও ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা অনেক সুবিধাজনক – কারণ তাতে পরিবহন খরচ ও দাম দুটোই কম পড়ে।

ভারতের অন্তত তিনটি রিফাইনারি বা তেল পরিশোধনাগারও পুরোপুরি ইরানের তেলের ওপর নির্ভরশীল ছিল মাত্র কিছুদিন আগে পর্যন্তও।

জ্বালানি খাতের সিনিয়র সাংবাদিক জ্যোতি মুকুল জানাচ্ছেন, ‘গত কয়েক মাসে কিন্তু ভারত ইরানি তেলের বিকল্প কিছু কিছু ব্যবস্থাও নিতে শুরু করেছে।’

‘পাশাপাশি চীন, জাপান, ভারতের মতো বৃহৎ ক্রেতা দেশগুলো একটা কনজিউমার ব্লক তৈরি করে এক সুরে কথা বলারও চেষ্টা করছে, কেন এশিয়ার দেশগুলো তেলের বেশি দাম দেবে সেই প্রশ্নও তুলছে।’

‘তবু আমি বলব, ইরান থেকে তেল কতটা কম আসবে সেই প্রশ্নটা যতটা না-দামের – বরং তার চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির’, বলছেন মিস মুকুল।

ইরান সঙ্কটে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সম্প্রতি অনেকটাই বেড়েছে – কিন্তু ভারতে ভোটের মৌসুমে সরকার পেট্রল-ডিজেলের দামে ততটা আঁচ পড়তে দেয়নি।

অনেকে আশঙ্কা করছেন, এ দেশে ক’দিন বাদে ভোট মিটলেই তেলের দাম একলাফে অনেকটা বাড়াতে হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অসীমা গোয়েল অবশ্য বলছেন, ‘গত বছর একটা সময় ভাবা হচ্ছিল তেলের দাম একশো ডলার ছোঁবে, যদিও তা শেষ পর্যন্ত হয়নি।’

‘সেই অভিজ্ঞতার পর আমি কিন্তু এবারও আশাবাদী দামটা নাগালের মধ্যেই থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী মোদীর পররাষ্ট্রনীতিতে ইরান খুবই গুরুত্ব পেয়ে এসেছে
‘সৌদি-সহ ওপেক দেশগুলোর ওপর মার্কিন চাপ, শেল গ্যাস বা নানা ধরনের বিকল্প গ্রিন এনার্জির কারণে আমার মনে হয় না তেলের দাম ভীষণ বেড়ে যাবে বলে।’

এদিকে কামার আগা আবার নিশ্চিত, এদিন সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবধারিতভাবে চাবাহার তাস ব্যবহার করেছেন।

ইরানের মাটিতে তৈরি সেই বন্দর ভারতেরই বানানো, সেখানে শত শত কোটি ডলার লগ্নিও করছে তারা। আফগানিস্তান-মধ্য এশিয়া বা রাশিয়াতেও ভারতের গেটওয়ে এই চাবাহার।

ইরান যাতে পাকিস্তান বা চীনের দিকে বেশি না ঝোঁকে, সেটাও ভারত নিশ্চিত করতে চায়।

ফলে একদিকে শস্তা তেল, চাবাহার ও ইরানের সাথে স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক আর অন্যদিকে আমেরিকার সমর্থনের প্রয়োজনীয়তা – এই চরম উভয় সঙ্কটের মধ্যেই সমাধানের পথ খুঁজতে হচ্ছে দিল্লিকে।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ