• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ন

আগামীকাল কক্সবাজার পৌর নির্বাচন : জেলা আ. লীগের সঙ্গে ত্যাগী আ. লীগ পরিবারের ভোটযুদ্ধ!

ইব্রাহিম খলিল / ৩৪ ভিউ টাইম
আপডেট : রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩

আগামীকাল সোমবার কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের ছোট্ট একটি পৌরসভা হলেও এলাকার গুরুত্ব নিয়ে সরকারের উচ্চ মহল থেকে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ে পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে নীরব মাতামাতি চলছে। মূলত আগামীকালের নির্বাচনে মেয়রের চেয়ার নিয়ে টানাটানি চলছে জেলা শহরের ‘ত্যাগী একটি আওয়ামী পরিবারের’ সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে সাধারণ ভোটাররা নীরবতা পালন করছেন।

তদুপরি নির্বাচনী ফলাফলে সরকার বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ নীরব ভোটেই হবে ভাগ্য নির্ধারণ। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে কোনো বিরোধী দলের প্রার্থী নেই। জামায়াতের একজন মনোনয়ন দিয়েও পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তবে কাউন্সিলর পদে অনেকেই রয়েছেন।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ইতিমধ্যে বিএনপি ১২ জন দলীয় নেতাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে। পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের ৯৪ হাজার ৮১১ জন ভোটার রয়েছে। যেখানে পুরুষ ভোটার ৪৯ হাজার ৮৮৫ জন এবং নারী ভোটার সংখ্যা ৪৪ হাজার ৯২৬ জন। ৪৩টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে চলবে ভোটগ্রহণ।

কক্সবাজার পৌরসভায় যেহেতু বিএনপি ও জামায়াতের কোনো প্রার্থী নেই সেহেতু দল দু’টির নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ সাধারণ নিরব ভোটাররাই এখন বড় ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করবে বলে অনেকেরই ধারণা।

পৌরসভার এবারের নির্বাচনে ৫ জন মেয়র প্রার্থীসহ ৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মূলত নির্বাচনে পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান এবং পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তিন বারের কাউন্সিলর ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দল মাহবুবুর রহমান চৌধুরীকেই মনোনয়ন দিয়েছেন।

অপরদিকে পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালীন সময়ের সভাপতি প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম মোজাম্মেল হকের জ্যেষ্ঠ পুত্র মাসেদুল হক রাশেদ হয়েছেন মেয়র পদের বিদ্রোহী প্রার্থী।

মেয়র পদের দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিই জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে মাসেদুল হক রাশেদকে দল থেকে যথারীতি বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তার অপর দুই ভাই যথাক্রমে যুবলীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক সোহেল, কক্সসবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েল এবং জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি তাহমিনা নুসরাত জাহান লুনাকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে কক্সবাজার জেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী হয়ে শাহীনুল হক মার্শাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতির পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন।

নির্বাচনে মেয়রের দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিই জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তফসিল ঘোষণার পর পরই জেলা শহরের বড় মাপের ব্যবসায়ী বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ (নারিকেল গাছ প্রতীক) ভোটের মাঠে নেমে আলোচনায় চলে আসেন। দলীয় মনোনয়ন পেয়েও মাহবুবুর রহমান (নৌকা প্রতীক) প্রথমদিকে প্রচারণার মাঠে অনেক পিছিয়ে ছিলেন। কেননা পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় তার বিশাল দলীয় অনুসারি ছিলেন সিদ্ধান্তহীনতায়। মেয়র মুজিবুর রহমান হচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের জেঠাতো ভাই। তারপরেও তিনি দলীয় মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরীকে বিজয়ী করতে মাঠে মাঠে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নির্বাচনী প্রচারণায় একদিকে চলছে জেলা শহরের ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল পরিবারের ৪ ভ্রাতা, এক বোন ও তাদের ৪ স্ত্রী। অপরদিকে কক্সবাজার জেলা ও পৌর আওয়ামী লীগসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য রাতদিন গণসংযোগ করে চলেছেন।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন- ‘আমি তিনবারের পরীক্ষিত পৌরসভার সেবক (কাউন্সিলর) ছিলাম। আমি ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগ এবং সর্বশেষ জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসাবে কাজ করছি। এ শহরের মানুষ অবশ্যই আমাকে সমর্থন দেবেন।’

এদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী দিন দিন এগিয়ে যাওয়ায় দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে টনক নড়ে। এক পর্যায়ে বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদকে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে সরে যাওয়ার জন্যও অনেক দেনদরবার করা হয়েছে। কিন্তু তিনি মেয়রের নির্বাচনে অনড় থেকে যান।

এ বিষয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ বলেন- ‘আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার পর পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনি (আমার বাবা) কক্সবাজারের আওয়ামী লীগের ‘বটবৃক্ষ’ হিসাবে পরিচিত। আমাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় আমার বাবার অনুসারি দলীয় কর্মীদের চাপে আমি প্রার্থী হয়েছি।’ রাশেদ অভিযোগের সুরে জানান, তাকে ইতিমধ্যে অনেক চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে নির্বাচন থেকে সরে যেতে। কিন্তু তিনি না সরায় এখন তার সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এমনকি শনিবার তার দুই সমর্থককে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

পৌর নির্বাচনের এমন ঢামাঢোলের মধ্যে গত ৬ জুন রাতে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী সমাবেশে এক ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতার আপত্তিকর বক্তব্যে দেশে-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে। তাও এমন সময়েই ওই ইউপি চেয়ারম্যান বিতর্কিত এবং আপত্তিকর বক্তব্যটি প্রদান করেছেন যখন দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র চলছিল দেশের সরকার ও ক্ষমতাসীন দলটির বিরুদ্ধে।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পদ প্রত্যাশী এস এম ইমরুল কায়েস চৌধুরী ওই সমাবেশে বিগত কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে ৮টি ভোটকেন্দ্রে কারচুপি ও ভোট ডাকাতির কথা বলে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেন। যখন ইভিএম পদ্ধতির বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির প্রচেষ্টা করা হচ্ছিল তখনই এমন ঘটনায় সমালোচকদের মুখে ইভিএম পদ্ধতির ভোট নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এদিকে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সাংগঠনিক সফরে কক্সবাজারে আসেন। তিনি এসে নেতাকর্মীদের প্রতি দলীয় মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে জেতাতে কঠোর বার্তা দেওয়ার পর থেকেই জেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মেয়র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর নৌকা প্রতীকের জন্য জোরেশোরে মাঠে নামেন। গত ক’দিন ধরে দলের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা দলীয় মনোনীত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগসহ নির্বাচনী সমাবেশে অংশগ্রহণ করছেন।

অপরদিকে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানসহ দলীয় নেতাকর্মীরাও ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এসব কারণে শুরুতে পিছিয়ে থাকা মাহবুবুর রহমান চৌধুরী শেষ মুহূর্তে অনেক এগিয়ে এসেছেন বলে মনে করছেন সচেতন লোকজন। আর এসব কারণেই নির্বাচনে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ