• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন

টেকনাফ পৌরসভার হিসাব রক্ষক সৈয়দ হোসেন সাত বছরে শতকোটি টাকার মালিক

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৬৭ ভিউ টাইম
আপডেট : মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

কক্সবাজার সীমান্ত শহর টেকনাফ পৌরসভার হিসাব রক্ষক সৈয়দ হোসেনের প্রতারণা করে সাত বছরে প্রায় শতকোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের টাকা সঞ্চয় প্রকল্পের নিরাপদ ব্যাংকার খ্যাত সৈয়দ হোসেন ওরফে সেলিমের নামে বেনামে টেকনাফ উপজেলার বিভিন্নস্থানে ও তার স্ত্রীর নামে অন্তত ১০ একর জমি রয়েছে এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার শহরে ফ্ল্যাট, টেকনাফ নয়া বাজারে মার্কেট রয়েছে। এসব নিয়ে তার নিজ এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে সে।

টেকনাফ পৌরসভার হিসাব রক্ষক সৈয়দের এসব স্থাবর অস্থাবর জমির মূল্য প্রায় ৩০/৪০ কোটি টাকার অধিক হবে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের। এদিকে তার স্ত্রী ও তার নামে একাধিক ব্যাংকে কোটি কোটি সঞ্চয় রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তবে বেশ কিছুদিন আগে হোয়াইক্যং নয়া বাজারে যে অদৃশ্য টাকার মারফতে মার্কেট নির্মাণ করেন এই সৈয়দের টাকার উৎস নিয়ে চলছে ব্যাপক ধুম্রজাল। এমন কি তাকে নিয়ে প্রশাসন সহ টেকনাফ শহরজুড়ে লোকেমুখে হৈচৈ শুরু পড়ে যায় এসব বিষয়ে জানাজানি পর। টেকনাফ শহরে হোয়াইক্যং হ্নীলায় স্টেশনের সর্বত্রে এখন একটাই জানার আগ্রহ সৈয়দ হোসেন এতো টাকার মালিক হলো কোন মাধ্যমে?

সরেজমিন তদন্তে দেখা যায়, টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পূর্ব সাতঘরিয়া পাড়ার মৃত সোলেমানের পুত্র সৈয়দ হোসেন কিছুকাল আগে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিওতে) চাকুরিজীবী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপরে টেকনাফ পৌরসভার হিসাব রক্ষক হয়ে জীবনবৃত্তে কোটিপতির খাতায় নাম লিখাতে সক্ষম হয়। এই সময়ে তার জীবনের আলাদীনের চেরাগের আদলে সম্পদের পাহাড় গড়া শুরু করে অবারিত! সাথে যোগ হয় তাঁর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের দূর্নীতি। তার স্ত্রী সাবিনা টেকনাফে স্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে নিয়োজিত সেখানেও তার বিরুদ্ধে বাচ্চাদের টিকা কার্ড প্রদানসহ নানা রকম দূর্নীতির অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সৈয়দ হোসেন পৌরসভার হিসাব রক্ষকের চেয়ারে বসে নিয়মিত ইয়াবা কারবারীদের টাকা আনা নেওয়া এবং পূরোদস্তর আন্ডারগ্রাউন্ডের ইয়াবার যোগানদাতা হিসেবে ২০১২ সাল থেকে আজ অবধি কাজ করছে এবং মাদক কারবারীদের সাথে সমন্বয় করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায়। এ সুযোগে সে ক্রয় করে ১০ একর কাছাকাছি জমি যার মধ্যে দুদুকের মারপ্যাঁচ থেকে রেহায় পেতে ওইসব জমির সাথে তার স্ত্রীর নামও যোগ করেন এই ইয়াবার যোগানদাতা ও দূর্নীতিবাজ সৈয়দ হোসেন ওরফে সেলিম।

এসব জমিগুলো অনুসন্ধান করে দেখা যায়, জমির অবস্থান মধ্য হ্নীলা মৌজার পূর্ব সাতঘরিয়া পাড়া, পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়া এবং নয়াবাজার স্টেশন সংলগ্ন, হ্নীলা, টেকনাফ সদর সহ একাধিক স্থানে। এমনকি চট্টগ্রাম কক্সবাজারে নামে বেনামে আবাসন প্রকল্পেও তার ফ্ল্যাট প্লটও রয়েছে।

হ্নীলা ও হোয়াইক্যং এলাকার একাধিক লোকজন বলেন, তার শাশুড় বাড়ি হ্নীলা সিকদার পাড়ায়। তার শশুড় মৃত রুস্তম পেশায় একজন গ্রাম্য ডাক্তার ছিলেন। তার ছোটভাই জিয়াবুল হক, ইয়াবা নিয়ে আটক হয়ে জেলে ছিলেন দীর্ঘ সময় এবং সৈয়দ হোসেন নিজেই জিয়াবুলকে একটা সিএনজি গাড়ি কিনে দিয়ে রীতিমত মাদক বহন করাতেন একসময় ধরা পড়ে যায়।

স্থানীয়রা বলেন, এই সৈয়দ হোসেন শুধু মাদক ব্যবসা নয় সে ভূয়াভাবে খতিয়ান সৃজন করে বহুল আলোচিত হয়। একটি জমি খতিয়ান করে দ্বিতীয়বার ভূয়া কাগজ বানিয়ে আবার সেই জমি নামজারী করে। এই রকম ভূয়া কাগজ বানানো এবং ভূয়া নামজারী করা যেন তার রীতিমতো নেশা আর পেশায় পরিণত।
তারা বলেন, তার দূর্নীতির এমন একটি নজির এই প্রতিবেদকের কাছে আসে যে, বিগত ৪ জুলাই-২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ২৯৬৫ একটি খতিয়ান করে পরবর্তীতে সেই একই দাগের জমি হতে ২০ মার্চ ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে আবার একি দাগ হতে ভূয়া খতিয়ান বানায় প্রথমে ৮০ শতক পরে ১৩.৫০ শতক জমি বৃদ্ধি করে ভূয়াভাবে খতিয়ান সৃজন করেন সৈয়দ হোসেন। এসব খতিয়ানের নাম্বার- ৪৪৪৫, ২০০, ৪৪৬৬

এমনকি এই দূর্নীতিবাজ সৈয়দ হোসেনের বিরুদ্ধে টেকনাফ হোয়াইক্যং পশ্চিম সাত ঘরিয়া পাড়ার আব্দু শুক্কুরের একটি জমি ভয়াবহ প্রতারণা করে ক্রয় করারও অভিযোগ উঠে। প্রতারণার শিকার হওয়া শুক্কুর বলেন, তার কাছ থেকে ৬০ কড়া জমি রেজিস্ট্রি করবে বলে রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে যায় তাকে, পরে সে দলিলে ৬০ শতক লিখে ফাইনাল দলিল করে নেয় প্রতারক সৈয়দ হোসেন সেলিম।

এখন আব্দু শুক্কুরের ঘরের ভিটেমাটি সহ রেজিস্ট্রি নিয়ে প্রতারক সৈয়দ হোসেন রীতিমত তাকে হুমকি ধমকি শুরু করেছে। অসহায় শুক্কুর সৈয়দ হোসেনের প্রতারণার শিকার হয়ে এখন প্রায় পথে বসেছে। সে এখন শুধু সবাইকে তার দুঃখের যন্ত্রণা টা বুঝার চেষ্টা করে। যেই দলিল সৈয়দ প্রতারণা করেছে তার দলিল নাম্বার হচ্ছে -২৪৪৪। প্রতারক সৈয়দের বিরুদ্ধে ভূয়া ৫৪৭৬ নাম্বার নামজারি খতিয়ান করার আরো একটি প্রমাণ পাওয়া যায়। অথচ যার জমি সে মারা ২০০৩ সালে আর তার থেকে জমি ক্রয় দেখায় মারা যাওয়ার পর ২০১৯ সালে!
এছাড়া তার বিরুদ্ধে টেকনাফ পৌরসভার হিসাব রক্ষক পদে বসে পৌরসভার ট্রেট লাইসেন্স, বিভিন্ন খাতে সরকারি ফি’র অতিরিক্ত টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এলাকাবাসীর দাবী এই ইয়াবা কারবারি ও প্রতারক সৈয়দ হোসেন ওরফে সেলিমকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার।
এ বিষয়ে সৈয়দ হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি বলেন আমি সরকারি চাকুরি করি এবং আমার স্ত্রীও সরকারি চাকুরি করে। আমি কোন মাদকের সাথে সম্পৃক্ত নই। দীর্ঘ ২৫ বছর চাকুরি করে এই সম্পদ অর্জন করেছি। আমি পৈত্রিকভাবে ৮/১০ খানি সম্পদ পেয়েছি। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে কিছু লোক।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ