• রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৩:৫৯ অপরাহ্ন

১০০ বছরেও পেকুয়া নতুনঘোনা-ভোলারটেক সড়কের সংস্কার নেই

নিউজ রুম / ৭৬ ভিউ টাইম
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ, ২০২০

নিউজ ডেস্ক:
১০০ বছর ধরে কোন ধরণের সংস্কার নেই পেকুয়া রাজাখালী নতুনঘোনা-ভোলারটেক সড়কে। শতাব্দী সময় পর্যন্ত রাজাখালী ইউনিয়নের নতুনঘোনা ব্রীজ থেকে ভোলারটেক পর্যন্ত সড়কটি উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রয়েছে। প্রায় ৫ কি.মিটার বিস্তৃত এ সড়কটিতে ছোঁয়া লাগেনি আধুনিকতার। এতে করে উপজেলার উপকুলবর্তী ইউনিয়ন রাজাখালীর তিনটি ওয়ার্ড়ের ৫ থেকে ৭টি গ্রামের মানুষের মাঝে দুর্ভোগ থেকে গেছে। সড়কটি সংস্কার বঞ্চিত থাকায় এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা থমকে রয়েছে। ইট না থাকায় ওই সড়ক দিয়ে চলাচল নেই কোন যানবাহন। ভোলারটেক থেকে সড়কটি পুর্বদিকে বিস্তৃত। বদিউদ্দিন পাড়া দক্ষিন অংশ হয়ে দক্ষিন রাজাখালী নতুনঘোনা,মগনামা-রাজাখালী পারাপার সেতু পর্যন্ত প্রায় ৫কি.মিটার দৈর্ঘ্য এ সড়কটি।

স্থানীয়রা জানায়,প্রায় একশ বছরের মধ্যে নতুনঘোনা-ভোলারটেক সড়কের উন্নয়ন হয়নি। রাজাখালী ইউনিয়নের দক্ষিন অংশে এ সড়কটির অবস্থান। ভোলাখালের তীর রক্ষার জন্য পাউবো ওই স্থানে বেড়িবাধ নির্মান করেছেন। লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঠেকাতে দক্ষিন অংশে কুতুবদিয়া চ্যানেলের নিকটতম অবস্থানে বেড়িবাধ নির্মানকাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। সড়কের পশ্চিম প্রান্তে প্রখ্যাত জমিদার আতাউর রহমান খান কায়সার মিয়ার বাড়ি। সে সুবাধে এ জায়গাটি রাজাখালী ছাড়াও কক্সবাজার জেলায় পরিচিত। আতাউর রহমান খান কায়সার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। বীর এ মুক্তিযুদ্ধা এ বাড়িতে থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করছিলেন।

বয়জৈষ্ট্য অনেক মুরব্বিরা জানায়, মুক্তিযুদ্ধরা কায়সার মিয়ার বাড়িতে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু কালক্রমে এ ঐতিহাসিক স্থানটি উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত আছে। বকশিয়া ঘোনা পয়েন্টে দরবার জেটিঘাট ছিল। কুতুবদিয়ার শাহ আব্দুল মালেক কুতুবীর মাজার শরীফে যাতায়তের জন্য ওই ঘাটের নাম করন করা হয় দরবার জেটিঘাট। রাজাখালী ছাড়াও উপকুলের বিপুল জনগোষ্টির যাতায়ত ছিল নৌ-পথ কেন্দ্রিক। ষ্টীমার ও লঞ্চ যোগে যাত্রীরা নদী পাড়ি দিতেন। জেলা শহর কক্সবাজার, চট্টগ্রাম শহরে যাতায়তের মাধ্যম ছিল নদী পথ। সে সময় মানুষ নৌপথে যাতায়তের জন্য রাজাখালী দরবার জেটিঘাটে জড়ো হতেন। দরবার জেটিঘাটের নামের একটি সড়করও নাম করন ছিল। সবুজ বাজার থেকে বকশিয়া ঘোনা পর্যন্ত এ সড়কটির নাম ছিল দরবার সড়ক। বর্তমানে ওই সড়কটিও বেহাল দশায়। নতুনঘোনা-ভোলারটেক সড়কে যাতায়ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮হাজার।

স্থানীয় মোসলেম উদ্দিন, জাকের হোসেন, আব্দু ছালাম, শফিউল আলম, মাষ্টার আমির হোসেন, আলী আহমদ, মোজাম্মেল হক জানায়, তিনটি ওয়ার্ড়ের মানুষের যোগাযোগের জন্য এ সড়কটির গুরুত্ব অপরসীম। তিনটি ওয়ার্ড়ের গ্রামগুলোর মধ্যে বদিউদ্দিন পাড়া, বকশিয়া ঘোনা, নতুনঘোনা, পালাকাটার আংশিক, ছড়িপাড়া ও সুন্দরীপাড়া সহ প্রায় ৭টি গ্রামের মানুষ এ সড়ক দিয়ে যাতায়ত করে। উপকুলের লবন, শুটকি, সামুদ্রিক মৎস্য ও মাছের পোনা পরিবহনের জন্যেও সড়কটির গুরুত্ব অত্যন্ত সুদুর প্রসারী। সংস্কার না হওয়ায় সামুদ্রিক থেকে আহরিত মাছ ও মাঠ থেকে উৎপাদিত কাচা লবন পরিবহন ব্যবস্থাও থমকে রয়েছে।

৩টি শিক্ষা প্রতিষ্টানও এ সড়কের উপর গুরুত্ববহন করে। বকশিয়া ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নতুনঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বদিউদ্দিন পাড়া এলাহী এবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষার্থীদের যাতায়তের জন্য এ সড়কটির প্রয়োজনীয়তা বেশি। বর্ষার সময় পিচ্চিল ও কাদাযুক্ত সড়ক দিয়ে পায়ে হেটে যাতায়ত করতে হয়। সড়কটি বেহাল থাকায় জনদুর্ভোগের শেষ নেই। ভোলাখালের উপরে সেতু আছে। মগনামা ও রাজাখালীর যাতায়ত একত্রিকরন করতে সরকার নতুনঘোনা পয়েন্টে একটি সেতু নির্মানকাজ শেষ করেছে। সেতু থেকে ভোলারটেক পর্যন্ত এ সড়কটি কাচা থেকে গেছে। উন্নতি না হওয়ায় সেতুর প্রয়োজনীয়তাও হ্রাস পেয়েছে। প্রধান সড়ক কাচা থাকায় সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল নেই।

ব্যবসায়ী বাবুল, শাহাব উদ্দিন, নেজাম উদ্দিন, লবন ও চিংড়ি ব্যবসায়ী নুরুল আবছার বদু, ছমি উল্লাহ কোম্পানী, জাহাঙ্গীর, নুরুন্নবী বাদশাহ, আহমদ কবির, মৎস্য ও পোনা ব্যবসায়ী আবু ছৈয়দ, রেজাউল করিম, শাহাব উদ্দিন জানায়, বেড়িবাধের এ সড়কটি দক্ষিন রাজাখালীর জন্য যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। কিন্তু উন্নয়নের ছোঁয়া নেই। ইট বসানো হয়নি কখনো। যান চলাচলও নেই। সড়কটি জরুরী ভিত্তিতে ইট বসিয়ে সংস্কার চাই আমরা।

শিক্ষক রমিজ উদ্দিন, অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক আহমদ হোসেন, শিক্ষার্থী আরকান, আবু হানিফ, রাবিয়া রোকসানা, রেখা, বিলকিস জানায়,আমরা খুবই কষ্টে আছি। একটি সড়কের জন্য তিনটি ওয়ার্ড় দুর্ভোগে থাকতে পারেনা। আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি চাই। সড়কে ইট চাই।

ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান, ইসমাইল ও অলি আহমদ জানায়,জনগন আমাদেরকে ভোট দেন। আমরা ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকি। কিন্তু এ সড়কটি একশ বছর ধরে অচল থেকে গেছে। আমরা দ্রুত এ সড়কটির সংস্কার চাই।

ইউপি চেয়ারম্যান মো.ছৈয়দ নুর জানান, নতুনঘোনা ব্রীজ থেকে দক্ষিন বকশিয়াঘোনা ভোলারটেক পর্যন্ত এ সড়কটি রাজাখালীর প্রধান সড়ক। এক সময় পেকুয়া, চকরিয়া ও বাঁশখালীর আংশিক অঞ্চলের মানুষের চলাচলের অন্যতম মাধ্যম ছিল। বেড়িবাধের এ সড়কটি ইট বসিয়ে সংস্কার করা মানুষের প্রানের দাবি। আমি রাজাখালী বাসির পক্ষে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জোরদাবি জানাচ্ছি জরুরী ভিত্তিতে এ সড়ক সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হোক।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ