• বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন

‘খাদ্যজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতা-ই অপুষ্টির মূল কারণ’

Md. Nazim Uddin / ২৬ ভিউ টাইম
আপডেট : সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গত একটি বছর করোনা মহামারীর সাথে লড়ছে বিশ্ব। অনু এ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়তে মানবদেহে ‘এন্টিবডি’ সৃষ্টির তোড়জোড় চলছে। বের হয়েছে টিকাও। কিন্তু শাক-সবজি, ফলমূল ও প্রাণীজ আমিষের সুষম খাদ্যাভ্যাসে দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা এন্টিবডি করা সম্ভব। শুধু জানা থাকা দরকার প্রকৃতির কোন শস্যে কি উপাদান উপস্থিত এবং তা কিভাবে ভোগ করতে হবে। মনে রাখা দরকার সুস্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাবার গ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।

কক্সবাজারে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ফিস আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ পরবর্তী পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার সম্পর্কে সচেতনতা’ শীর্ষক ৪ দিনব্যাপী কর্মশালায় এসব কথা বলা হয়েছে।

সৈকত তীরে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের হল রুমে ১২ ফেব্রুয়ারি হতে ১৫ ফেব্রুয়ারি ৪ দিনব্যাপী কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল সদস্য, পরিচালক ও পুষ্টি বিজ্ঞানী ড. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, শক্তি ও তাপ উৎপাদক, আমিষ জাতীয় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকারি-এ তিন ধরণের খাবার একজন মানুষের দৈনিক গ্রহণ করা দরকার। সুস্থ থাকতে দৈনিক ১০০ গ্রাম শাক, ২০০ গ্রাম সবজি ও ১০০ গ্রাম ফল খেতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে অতি দামী খাবারের দরকার পড়ে না। সাধ্যের মধ্যে পাওয়া শাক-সবজির অনেকগুলোতে পুষ্টির আধার থাকে।

কর্মশালায় জানানো হয়, খাদ্যজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতা-ই অপুষ্টির মূল কারণ। অনেকে শুধু পেট ভরার জন্য খাবার গ্রহণ করেন। নারীরাই এ কাজটি বেশি করে থাকেন। ফলে শিশু বেলা থেকেই নারীরা অপুষ্টিতে ভোগে। গর্ভকালীন খনিজ-আয়রন-ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার সঠিক ভাবে খেলে গর্ভের শিশু পুষ্টি নিয়ে জন্মায়। ব্রকলিসহ বেস কয়েকটি সবজি গর্ভবতী নারীদের জন্য মহৌষধের মতো কাজ করে। সাথে ছোট মাছও পরিপূর্ণ আমিষ জোগায়।

কর্মশালায় পুষ্টি বিজ্ঞানী ড. মো. মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, আমাদের নিত্য খাবারের মাঝে রসুন হৃদরোগ ও হৃদরোগ জনিত স্ট্রোক প্রতিরোধ করে। রসুনের পুষ্টিগুণ কোভিডের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকর। এভাবে টমেটো, গাজরসহ বিভিন্ন শস্যে নানা রোগ প্রতিরোধক উপদান রয়েছে। তবে, শস্য উৎপাদনে পরিমিত কীটনাশক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এতে কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি দরকার। পরিমিত কীটনাশক ব্যবহৃত সবজি রান্নার পূর্বে পরিচ্ছন্ন ভাবে পরিস্কার করলে বিষক্রিয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

কর্মশালায় জানানো হয়, অপুষ্টিকর প্রক্রিয়াজাত খাবার রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবহার্য্য প্লাস্টিক পণ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। আয়োডিন গলগণ্ড রোগের সৃষ্টি করে। সামুদ্রিক মাছে আয়োডিন থাকলেও উপকূলে বসবাসকারী বা সামুদ্রিক মাছ ভক্ষণ করা লোকেরও আয়োডিনের অভাব হতে পারে। মাছের ফুলকায় আয়োডিন থাকলেও তা অনেকেই খান না। ফলে, সামুদ্রিক মাছ খাওয়া লোকজনের আয়োডিনের অভাব পুরণে আয়োডাইজ লবণ খাওয়া দরকার। মনে রাখা দরকার, গরম পেলে আয়োডিনের গুনাগুন নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে আয়োডিন লবণের ব্যবহার সম্পর্কেও সম্যক ধারণা রাখতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল সদস্য, পরিচালক ও পুষ্টি বিজ্ঞানী ড. মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, অনেকের ধারণা বাজারে বিক্রয়করা মাছ-সবজি ও ফলমূলে ফরমালিন থাকে। এ ধারণা ভূল। ফরমালিন পানিতে দ্রবণীয়। মাছে প্রাকৃতিক ভাবে কিছু পরিমাণ ফরমালিনের উপস্থিতি থাকে। ফরমালিন বায়বীয় ও দ্রবণীয় হওয়ায় এর উপস্থিতি স্থায়ী নয়। কীটনাশকের ভয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার এড়িয়ে অপুষ্টি ডেকে আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে খাদ্যগুন সম্পর্কে আরো সচেতন হওয়া দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, অনেকের ধারণা ভাত না খেয়ে আটা রুটি খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীর জন্য মঙ্গল। তবে, এটি ভুল ধারণা। গমের খাবারের ডায়াবেটিস রোগীরা হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকেন। মিষ্টি আলো না খেতে উৎসাহিত করেন অনেকে। কিন্তু পরিমিত ভাত ও মিষ্টি আলো ডায়াবেটিস সহনীয়। তবে, নানা রঙের সবজিই ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের রোগীর জন্য উপকারী।

কর্মশালায় ওয়ার্ল্ড ফিসের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. এমদাদ হোসেন, কক্সবাজার অঞ্চলের কো-অর্ডিনেটর এসএম নুরুন্নবী, পুষ্টি বিশেষজ্ঞ আবু হাসান আলী ও মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান কর্মশালা সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন।

এতে, শিক্ষক, কৃষক, মৎস্য চাষী, শিক্ষার্থী, এনজিওকর্মী, যুব লিডার, সংগঠক, সাংবাদিকসহ নানা পেশার ৩০ জন কর্মশালায় অংশ নেন। শেষ দিনে অংশগ্রহণকারিদের সনদও বিতরণ করা হয়। কর্মশালায় লব্দ জ্ঞান চারপাশে বিলাতে অংশগ্রহণকারিদের প্রতি অনুরোধ জানান আয়োজকরা।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ