• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২২ অপরাহ্ন

দুর্বৃত্ত হামলার ছয়দিনেও বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার আইনি সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ

Md. Nazim Uddin / ১৬ ভিউ টাইম
আপডেট : রবিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২১

নিজস্ব প্রতিনিধি:

কক্সবাজার শহরে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত হামলার ছয়দিন পার হলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়নি সদর থানা পুলিশ।

তুচ্ছ ঘটনার জেরে চালানো হামলায় মুক্তিযোদ্ধার ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রীসহ চার ছেলে-মেয়েকে অমানবিক ভাবে কোপানো, ঘর-বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় অভিযোগ দেয়ার পরও আইনী পদক্ষেপ না নেয়ায় সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জখমী ও পরিবারের নারী সদস্যদের হামলাকারীরা নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।

হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার ন্যায়বিচার পেতে আইনী সহায়তার আকুতি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য আলমগীর ও হামলায় আহত বয়োবৃদ্ধা গৃহকর্ত্রী। গত ১৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন ফিশারিপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমের পরিবারে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে অনাড়ম্বর ভাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিপীড়িতরা এসব অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য আলমগীর অভিযোগ করেন, আমি (আলমগীর) একজন পরিচিত ব্যবসায়ী। আমরা কক্সবাজার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বিমান বন্দর গেইটস্থ ফিশারীঘাট নতুন পাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। আমার পিতা আবুল কাশেম ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ কারি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা (কক্সবাজার সদর ক্রমিক নং-৬৮)। এলাকার শান্তিপ্রিয়, সম্ভ্রান্ত ও সু-শিক্ষিত পরিবার আমাদের। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে আমার পিতা বিভিন্ন দেশের সাথে মৎস্য ব্যবসা করে আসছিলেন। পিতার অবসর পরবর্তী ২০০৬ সাল থেকে আমি দেশের বিভিন্ন বিখ্যাত কিড মিলে কাঁচামাল সরবরাহ করে আসছি। ব্যবসা প্রসার করতে আমি তিনটি ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেছি।

লিখিত বক্তব্যে আলমগীর আরো বলেন, আমার ব্যবসার পরিধি বাড়ছে দেখে বিগত বেশ কিছুদিন ধরে এলাকার স্থানীয়, রোহিঙ্গা ও সমাজের লেবাসধারী কিছু দুষ্কৃতকারী পরস্পর যোগসাজসক্রমে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে নানাভাবে আমাদের ক্ষতিসাধন ও নাজেহাল করার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। ইতিপূর্বে উক্ত সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটটি আমার কাছ হতে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে। অন্যথায় আমাকে ব্যবসা করতে দিবে না বলে হুমকি দেয়। চাঁদা না পেয়ে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তারা।

আমার বসতবাড়ির সামনে স্থানীয় খলিলুর রহমানের ছেলে মো. ইসহাকের (৪৮) একটি ভাড়া চায়ের দোকান রয়েছে। দুষ্কৃতকারী ও চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটটি ইসহাকের দোকানে চা পানের বাহনায় এসে দোকানের ভিতরে না বসে আমার বাড়ির সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে আড্ডা দেয়। এসময় পরিবারের নারী সদস্য ও ভাড়াবাসার লোকজনদের নানাভাবে ইভটিজিং করে। নানাভাবে অঙ্গ-ভঙ্গি প্রদর্শনের মাধ্যমে যৌনহয়রানি করে আসছিল তারা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, ইতিপূর্বে আমার ছোট ভাই কলেজ শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম (২৪) মো. শাকিল (১৯) তাদের ইভটিজিং ও উচ্চস্বরে আড্ডা করতে নিষেধ করে। এর জেরে গত ১৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা সশস্ত্রাবস্থায় সংঘবদ্ধভাবে আমাদের বাসায় হামলা চালায়। তারায বিক্ষিপ্তভাবে ঘর-দুয়ার ও মালামাল ভাংচুর এবং স্বর্ণালংকার লুট করে।

তাদের বাঁধা দিতে গেলে আমার ছোট ভাই সাইফুল, শাকিল, ক্যান্সারাক্রান্ত মা জীবন আরা বেগম, ছোট বোন ইয়াসমিনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। প্রহার করে আহত করা হয় বয়োবৃদ্ধ পিতা মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমকেও। এসময় পরবারের নারী সদস্যদের শ্লীলতাহানি করা হয়। হামলা করা হয় বাড়িতে বেড়াতে আসা অতিথিদেরও। আমাদের উদ্ধার করতে এসে জখম হয়েছেন স্থানীয় জালাল হাজীর ছেলে মো. রহিম (৩৮)।

আলমগীর জানান, হামলাকারিরা চলে যাবার পর আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলা ও লুটের বিষয়ে ঘটনায় জড়িত স্থানীয় ফিশারী নতুন পাড়া এলাকার মৃত ইসমাইল মাঝির ছেলে জাফর (৪৫), জাফরের ছেলে মনির (২৮), দেলোয়ার (২৫), আব্দুর রহিমের ছেলে মিজান (২৮), ইসমাইল (৩৫), মৃত সোলেমানের ছেলে আলী হােছন (২৮), খলিলুর রহমানের ছেলে ইসহাক (৪৮), আব্দুর রহিমের ছেলে মো. আলম (২৫)সহ আরো ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এজাহার দায়ের করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে থানা পুলিশ এখনো মামলা রুজু করেনি।

এ কারনে সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হয়ে আমাদেরকে প্রাননাশের হুমকিসহ নানা মিথ্যা অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। এতে, আমরা নিরুপায় হয়ে এলাকার শৃঙ্খলা রক্ষায় চিহ্নিত অপরাধী, অবৈধ অস্ত্রধারী, নারী উত্যক্তকারী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সুদৃষ্টি কামনায় গণমাধ্যমের স্মরনাপন্ন হয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে হামলায় প্রহৃত ও ক্যান্সারাক্রান্ত মা জীবন আরা বেগমসহ পরিবারের একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তারা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনাসহ পরিবারের নিরাপত্তা কামনা করেন।

বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মনিরুল গিয়াস একুশে পত্রিকাকে বলেন, মামলা না নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। এজহাজারে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকায় সংশোধন করে আবার দিতে বলা হয়েছিল।কিন্তুু তারা আর এজহাজার সংশোধন করে আর দেয়নি। এজহার ঠিক দিলে যে কোনসময় মামলাটি এন্ট্রি করা হবে।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ