• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৬:৩৫ অপরাহ্ন

মাতারবাড়ীতে সিঙ্গাপুর প্রকল্পের বেড়িবাঁধ কেটে দিয়েছে প্রভাবশালীরা

Md Nazim Uddin / ১৯ ভিউ টাইম
আপডেট : বুধবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২২
জনস্বার্থে কাটা হয়েছে দাবী অভিযুক্ত কাশেমের

* নিরাপত্তা ঝুঁকিতে দশ হাজার মানুষ
* দায় এড়িয়ে যাচ্ছে কোল পাওয়ার কর্তৃপক্ষ ও জন প্রতিনিধি
* নিরাপত্তার দায়িত্বে নেই জানালেন আনসার কমান্ডার
* লবন ব্যবসায়ী কাশেমের নেতৃত্বে চলছে লবন নৈরাজ্য
* প্রান্তিক চাষীদের জিম্মি করে বছরে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য

কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে কোল পাওয়ারের আওতাধিন সিঙ্গাপুর প্রকল্প সংলগ্ন বেড়িবাঁধ রাতের অন্ধকারে কেটে দিয়েছে কিছু প্রভাবশালীরা।

কয়লা বিদ্যুৎ এর জন্য সরকারের অধিগ্রহনকৃত সিঙ্গাপুর প্রজেক্টের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ফার্মঘোনা ও ১৮ ধোন্ন্যা ঘোনা দখল নিতে মাতারবাড়ি কোলপাওয়াররে কতিপয় কয়েকজন কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে পশ্চিম সিকদার পাড়ার মৃত মোজাহার আহমদের ছেলে কাসেম ও হাজী নাছির আহমেদের ছেলে সাবেক মেম্বার আব্দুর রউফ এর নেতৃত্বে সিকদার পাড়ার মৃত দৌলতখানের ছেলে বদরুদ্দোজা, জাফর আলমসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ছত্রছায়ায় আরও কয়েকজন মিলে স্কেভেটার দিয়ে বেড়িবাঁধ কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ জানুয়ারী (রবিবার দ্বিবাগত রাত ৯টার পরে) এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে বেড়িবাঁধ কেটে দেওয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছে হন্দারাবিল, পূর্বপাড়া, বানিয়াকাটা, বান্ডি সিকদার পাড়া ও উত্তর সিকদার পাড়ার প্রায় দুই হাজার পরিবারের দশ হাজার মানুষ।

স্থানীয় এলাকাবাসী তথ্যমতে জানা যায়, সরকার দলীয় কিছু নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা মিলে লবণ এবং প্রজেক্ট করার জন্য সিকিউরিটি ইনচার্জ আনসার কমান্ডার ও কোল পাওয়া এর ইনচার্জ কে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে বেড়িবাঁধ কেটেছে। তাদেরকে লবণ মাঠে পানি ঢোকাতেও প্রতিখানি টাকা দিয়ে ঢোকাতে হবে! প্রান্তিক লবণ চাষীদের জিম্মি করে কোটি টাকার বাণিজ্য করছে কাশেম সিন্ডিকেট। প্রতি মন লবনে অন্যয্য ভাবে দিতে হয় ২৫-৩০ টাকা করে। একখানিতে লবণ হয় ২৫০-৩০০শত মন পর্যন্ত। এই সিঙ্গাপুর প্রজেক্টে সরকার অধিগ্রহণ করে ১২০০শত একর, তারই মধ্যে অর্ধেকের বেশি জায়গা তাদের আওতায় রয়েছে। বার্ষিক আয় দাঁড়াচ্ছে ২ থেকে ৩ কোটি টাকার মতো।

তারা আরও জানান, তাদের বানিজ্য ও সুবিধা ভোগের জন্য বেড়িবাঁধ কেটেছে কারও সুবিধার জন্য নয়। তাদের কারণে আমাদের ভিটে বাড়ি ধ্বংস হয়ে যাবে। জোয়ারের পানি বেড়ে গেলে বা অতি বৃষ্টির কারণে বেড়িবাঁধের কাটা অংশে পানি ঢুকে প্লাবিত হবে ভিটে বাড়ি। অত্র এলাকাবাসী প্রচুর ক্ষতির সমুখে রয়েছে। তাই দ্রুত কাটা বেড়িবাঁধটি বেঁধে দিয়ে এলাকাবাসীকে ক্ষতির সমুখ থেকে বাঁচার জোর দাবি জানান।

বান্ডি সিকদার পাড়া ও সিকদার পাড়ার একাধিক চাষিরা জানান, উক্ত প্রজেক্টের উত্তর পাশের নতুন ঘোনায় মৃত হাজী মাইজ্যা মিয়ার ছেলে মৌলভী মোক্তার আহমদ তার সহযোগী আইয়ুব আলী, কুদ্দুস প্রতি মন লবণ থেকে ৩০-৪০ টাকা দালালী নিচ্ছে বলেও জানান। তাদের দেখাদেখি এরাও সিন্ডিকেট করে বেড়িবাঁধ কেটেছে।

অভিযোগের বিষয়ে কাশেম স্বীকার করে বলেন, জনস্বার্থে পানি নিষ্কাশনের জায়গা না থাকায় আমরা বাঁধটি কেটে দিয়েছি। তবে শুস্ক মৌসুমে কেন কাটা হলো প্রশ্ন করলে কোন সদোত্তর দিতে পারেনি।

এ বিষয়ে আব্দু রউফ এর মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন দিলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কাউছার সিকদার বলেন, বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ফার্মঘোনা ও ১৮ ধোন্নাই চিংড়ি প্রজেক্টটি বেশ কয়েকবছর ধরে আমি পরিচালনা করে আসতেছি। হঠাৎ করে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি চিংড়ি ঘেরটি দখল নেওয়ার জন্য কোলপাওয়ারের নাম বিক্রি করে রাতের অন্ধকারে বেড়িবাঁধটি কেটে দিয়েছে। ফলে আমরা বিষম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, অন্যদিকে বেড়িবাঁধ কেটে দেওয়ায় সিকদার পাড়া, হন্দারবিল ও বানিয়াকাটার কয়েকহাজার পরিবার বর্ষাকালে প্লাবিত হয়ে জনজীবনে চরম দুর্ভোগে পরিনিত হবে।

মাতারবাড়ি কোল পাওয়ার নিরাপত্তা প্রধান সিকিউরিটি ইনচার্জ আলফাজ উদ্দিন জানান, ওই প্রকল্পের দায়িত্ব আমাদের হাতে নেই। এটি স্থানীয় চেয়ারম্যানের হাতে। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু লোকজন আমাদেরকে না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে বেড়িবাঁধ কেটে ফেলেছে। শুনেছি তারা চেয়ারম্যানের লোক, তাই আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে জিডি করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বেড়িবাঁধ বেধে না দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হায়দার বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, তবে ভিতরের বাঁধ কাটলে তেমন সমস্যা নেই। বাইরের বাঁধ কাটলে সমস্যা হতো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকল্পটির নিরাপত্তার বিষয়ে আমাকে কেউ লিখিত দায়িত্ব দেয়নি।

সিঙ্গাপুর প্রকল্পের কোল পাওয়ার এর ইনচার্জ মনোয়ার সাহেব বলেন, আমাদের বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম নেই, আপনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে আলাপ করুন। স্থানীয় এলাকাবাসী আপনাকে অভিযুক্ত করছে যে টাকার বিনিময়ে আপনি এর সাথে জড়িত, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্থানীয়রা কে কি বলেছে আমার জানার প্রয়োজন নেই। আপনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে কথা বলুন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ এর সরকারী নাম্বারে ফোন করলে অতিঃ জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) রিসিভ করে বলেন, অতিঃ জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সরকারী ট্রেনিং এ উনি ঢাকায় আছেন। তাই তাঁহার বক্তব্য নেওয়াও সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে আগামী পর্বে তাঁহাদের বক্তব্য সংযোজন করা
হবে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ করোনা আক্রান্ত হওয়ার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ