• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১২:১৩ পূর্বাহ্ন

ভুল রিপোর্টে চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ২ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

মোঃ নুরুল হোসাইন / ৩৭ ভিউ টাইম
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০২২

কক্সবাজার শহরে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালের (আল ফুয়াদ) বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ভূল রিপোর্ট, ভুল চিকিৎসায় রোগীর পঙ্গুত্ব বরণ, চিকিৎসায় অবহেলা জনিত মৃত্যু,সেবার নামে গলাকাটা বানিজ্য, অপচিকিৎসা, চিকিৎসায় চাহিদা মত বিল দিতে না পারায় রোগী মারধরসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সংবাদ মাধ্যমে প্রায়স শিরোনাম হয় এ আল ফুয়াদ হাসপাতাল।তেমনই একটি ঘটনায় কক্সবাজার জেলা দায়রা ও জজ আদালতের মিনারুল কবির আল আমিন নামে এক তরুণ আইনজীবী বাদী হয়ে আল ফুয়াদ হাসপাতালের দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর আমলী আদালতে (সদর)চিকিৎসা অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করেন।

১৫ মার্চ (মঙ্গলবার) সকালে মনসুর সিদ্দীকির আদালতে এ মামলাটি দায়ের করা হয়।সেখানে আসামী করা হয় আল ফুয়াদ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ শাহ আলমকে ১ নং ও রেডিওলজি বিশেষজ্ঞ ডাঃ ওসমানুর রশিদকে ২ নং আসামী করা হয়।

বাদীর অভিযোগে জানা যায়,মামলার বাদীর পিতা গত বছরের ৬ অক্টোবর সকালে একটি ধর্মীয় প্রোগ্রামে বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।ওই দিন দ্রুত বাদীর পিতাকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়।কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে হার্টের সমস্যা জনিত কারনে সিসিওতে ভর্তি দেন।ততমধ্যে সিসিওতে কর্মরত চিকিৎসক রোগীকে সিটি স্কেনসহ বেশকিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরামর্শ দিলে তা দুপুর ০১ ঘটিকার সময় ওই হাসপাতালে সেইসব পরীক্ষা করার সুযোগ না থাকায় কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে বাদীর পিতাকে ঘটনাস্থল ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা করাতে গেলে প্রথমে রিসেপশনিস্ট শুরু থেকে পরীক্ষার ফিঃ নিয়ে বাদীর সাথে অসদাচরণ করেন।পরীক্ষা পরবর্তী সেই দিন বিকাল ৩-৪ টার দিকে সিটি স্কেন রিপোর্ট দেন।

সেই রিপোর্টে দেখা যায় বাদীর পিতার গুরুতর কিছু হয়নি,ব্রেইনে কোন সমস্যা হয়নি হার্টে একটু সমস্যা আছে কিন্তু বাদীর পিতার জ্ঞান ফিরে না আসায়,বাদী উদ্বিগ্ন অবস্থায় পূনরায় সদর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌরভের সাথে যোগাযোগ করলে তার পিতাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।সেই পরামর্শ মোতাবেক বাদী তার পিতাকে ওই দিন রাত ৩ টার দিকে আইসিইউ এম্বুলেন্সে করে দ্রুত চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।পরদিন সকাল ৭ টার সময় চট্টগ্রামে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে পৌঁছালে কর্মরত চিকিৎসক বাদীর পিতাকে আইসিইউতে ভর্তি দেন এবং পূনরায় রোগীকে সিটি স্কেনসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান।সেই সিটি স্কেন পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক জানান,বাদীর পিতার মেজর স্ট্রোক হয়েছে।

যার ফলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। বাদীর পিতা যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারনে বাদীর পিতার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।পরে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে ঢাকা শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।পরবর্তীতে সেখানকার চিকিৎসকও চট্টগ্রামের চিকিৎসকের মত একই মতামত প্রদান করেন। পরে উক্ত হাসপাতালে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারনে সেই বছরের ১০ অক্টোবর সকাল ৯ টার সময় বাদীর পিতা মৃত্যু বরণ করেন। এতে করে মামলার ১ নং আসামী ডাঃ শাহ আলমের অব্যবস্থাপনা ও ২ নং আসামীর ভুল পরীক্ষার রিপোর্টের কারনে বাদীর পিতা যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয় বলে দাবী করেন মামলার বাদী।

বাদীর ফৌজদারি অভিযোগ আমলে নিয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আদালতের মহামান্য বিচারক মনসুর সিদ্দিকী,পিবিআইকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।বাদী পক্ষের মামলাটি শুনানি করেন জেলা দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট ইমরুল কায়েসসহ একাধিক আইনজীবী।

মামলার বিষয়ে বাদীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এটা কক্সবাজারের জন্য নজিরবিহীন।আমি সাহস করে অন্যায় জুলুমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।এই আল ফুয়াদ হাসপাতালের ভুল রিপোর্টের কারনে আমার পিতা যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারনে মৃত্যু বরণ করেছেন। কিন্তু সে আর ফিরে আসবে না। এ হাসপাতালের বিরুদ্ধে এ রকম অহরহ অভিযোগ আছে কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।জনস্বার্থে আজ আমি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি,ভবিষ্যতে আমার মত আর কেহ যেন এই হাসপাতালে অপচিকিৎসার স্বীকার না হয়। আশা করছি পিবিআই সঠিক তদন্ত করে আদালতের যথাসময়ে রিপোর্ট দিবেন।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ