সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
চাকমারকুল মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম পন্ড করতে বহিস্কৃত শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকসহ চিহ্নিত কুচক্রিরা রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) জোহরের নামাজের পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হুমকি প্রদানের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন শিক্ষকবৃন্দ।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে মাদরাসার শিক্ষকদের সভা থেকে এ দাবী ও ক্ষোভের কথা জানানো হয় বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন মুহতামিম মাওলানা সিরাজুল ইসলাম।
সভায় শিক্ষকরা বলেন, কক্সবাজার জেলার প্রাচীনতম ও প্রধান দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রামু চাকমারকুল দারুল উলুম মাদরাসা। যেখানে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমান শিক্ষা ও অন্যান্য পরিবেশ সুশৃঙ্খল ও প্রশংসারযোগ্য। এরপরও নানা অনিয়মের অভিযোগে বহিস্কৃত শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকসহ একদল চিহ্নিত কুচক্রি মাদরাসার চলমান শিক্ষা কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে নানামুখি অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, যা সরাসরি দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিপক্ষে অবস্থান।
স্বার্থপরায়ন মহলটির এমন ঘৃণিত কাজে শিক্ষকদের পাশাপাশি স্থানীয়রা বাসিন্দারাও চরম লজ্জিত ও ক্ষুব্ধ।
যে মাদরাসা থেকে হাজারো আলেম উলামা সৃষ্টি হয়েছে, এমন একটি মাদরাসা নিয়ে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র চরম ধৃষ্টতার প্রমাণ বলে শিক্ষকরা মনে করেন।
মুহতামিম মাওলানা সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় নিন্দা জ্ঞাপন করেন- শিক্ষা পরিচালক মুহাদ্দিস মাওলানা কামাল হোছাইন, মুহাদ্দিস মাওলানা হারুন কদীম, মুহাদ্দিস মাওলানা ফিরোজ আহমদ, সহকারী শিক্ষক মাওলানা ছৈয়দ আহমদ, মুহাদ্দিস মাওলানা ইয়াকুব, মুহাদ্দিস মাওলানা সোলাইমান, মুহাদ্দিস মাওলানা হাবিব উল্লাহ, সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা হারুন জদীদ (হোস্টেল ইনচার্জ), মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা সিদ্দিক আহমদ, সহকারি শিক্ষক মাওলানা আনোয়ারুল হক, মাওলানা আব্দুর রশিদ, মাওলানা আজিজুর রহমান, মাওলানা কারী তৈয়ব, মাওলানা মিজানুর রহমান, মাওলানা মিনহাজ উদ্দিন, মাওলানা মামুনুর রশিদ, মাওলানা নুরুল হক (খতীব), মাওলানা আজিজুল হক, মাওলানা কারী ছাদেক উল্লাহ, মাওলানা হাফেজ সৈয়দ করীম, মাওলানা মুসলিম ইকবাল, মাওলানা নুরুল আমিন, নেয়ামত উল্লাহ, মাস্টার আবুল কালাম, মাওলানা ঈসা, মাওলানা ছলিম উল্লাহ, হাফেজ রমজান আলী, আব্দুর রউফ, মাওলানা আবু বক্কর, মাওলানা ঈসা, হুমায়ুন কবির, এরফানুল হক, মুয়াজ্জিন সানাউল্লাহ ও ইমরানুল হক।
সুত্র জানায়, মাদরাসার বিরুদ্ধে নানামুখি ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বহিস্কৃত শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে মুহতামিম মাওলানা সিরাজুল ইসলামসহ ৫ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১৪ জুলাই আদালতে মামলা করেন। যার সি.আর মামলা নং-২৫৩/১৯।
এছাড়া আব্দুর রাজ্জাক নিজের ছোট বোন মর্জিয়া সুলতানাকে বাদি করে গত ১৪ জুলাই রামু থানায় মামলা করেন। যার থানা মামলা নং-২২১/১৯, জিআর মামলা নং-১২/১৯।এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা করেন আবদুর রাজ্জাক ও তার মদদ পোষ্টরা।
মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিভিন্ন অনিয়মের কারনে বহিস্কার হওয়া শিক্ষক মাওলানা আবদুর রাজ্জাক ও তার সহযোগি নুরুল আলম, সাহাব উদ্দিন এবং ছলিম উল্লাহর নেতৃত্বে আরো ১০/১২ জন ভাড়াটে লোক ৮ সেপ্টেম্বর মুসল্লী বেশে জোহরের নামাজে পড়তে আসে। নামাজ শেষ হওয়ার পরই তারা মসজিদের মাইক নিয়ে জোরপূর্বক মাদ্রাসার সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষনা দেয়। এমনকি কোন শিক্ষক-শিক্ষার্থী মাদ্রাসার শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করলে তাদের মারধরের হুমকী দেয়া হয়। এসময় মসজিদে আসা স্থানীয় মুসল্লী, মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আবার নামাজের পরই মাইক নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করায় মুসল্লীরা সুন্নাত নামাজও আদায় করতে পারেনি।
তিনি আরো জানান, ইতিপূর্বে এ চক্রটি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম অচল করার হীন উদ্দেশ্যে মাদ্রাসার প্রধান প্রবেশ গেইটে তালা দিয়েছিলো। তবে মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদ ও স্থানীয় জনতার সহায়তায় তা প্রতিহত করা হয়। বর্তমানে মাদ্রাসায় পাঠদানসহ সকল কার্যক্রম সুষ্ঠু ও স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারিরা একের পর এক ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়ে ঐহিত্যবাহি দ্বীনি প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে উঠে-পড়ে লেগেছে।
জানা গেছে, মাদ্রাসাটি ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কাওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশ আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস পটিয়ার তত্ত্বাবধানে ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এ মাদ্রাসা (রেজিস্ট্রেশন নং-৪) পরিচালিত হয়ে আসছে। হুমকি-ধমকি দেয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত মাওলানা আবদুর রাজ্জাক এ মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক। মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার সময় অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, নিয়মিত উপস্থিত না থাকা, মাদ্রাসার বিধি বহির্ভূত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৭মে তাকে শিক্ষক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু বহিস্কারের পরও তিনি মসজিদ-মাদ্রাসার স্বার্থ বিরোধি বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছেন। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে তিনি মাদ্রাসার প্রধান প্রবেশ গেইটে তালা লাগিয়ে দিয়ে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কয়েকদফা হুমকি-ধমকি দিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির করে ঐতিহ্যবাহিন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বঃস্ব করার হীন প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ২ জুলাই কক্সবাজার বিজ্ঞ সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা (সিআর-২৩১/২০১৯) দায়ের করেন। এ মামলায় মাওলানা আবদুর রাজ্জাকসহ আরো ৩/৪ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্ত আবদুর রাজ্জাক পশ্চিম চাকমারকুল এলাকার মৃত আবদুর রহিমের ছেলে। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধিন রয়েছে। কিন্তু মামলাকে তোয়াক্কা না করে তিনি ফের অপকর্ম শুরু করেছেন।
স্থানীয় রফিক আহমদ নামক একজন সম্পূর্ণ নিরক্ষর ব্যক্তি কোন যোগ্যতায় ইত্তেহাদুল মাদারিসের মতো একটি প্রাতিষ্ঠানের বিরুদ্ধাচারণ করছে। এন আলম কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নিয়ে প্রাচীন একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্তৃত্ব করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে? এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের।