• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন

আমার স্বপ্নের কক্সবাজার : আনোয়ার হোসেন

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১৮ ভিউ টাইম
আপডেট : মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০২৩

ফিরে দেখা স্মৃতি : আমার স্বপ্নের কক্সবাজার

নব্বই দশকের শেষের দিকের কথা। আমি তখন কুমিল্লা জেলার লালমাই উপজেলার বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। একদিন স্কুল থেকে জানতে পারলাম প্রতিবছরের মতো এই বছর ও স্কুল থেকে শিক্ষা সফরে কক্সবাজার যাবে এবং চাঁদা ধরা হয়েছে ৩০০ টাকা। আমি শুনে খুশি হলাম এবং কক্সবাজারে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম।

কিন্তু ৩০০ টাকা পাবো কোথায়। টানাটানির সংসারে আমার পিতা কি টাকা দিবেন। পিতার কাছে কিভাবে টাকা চাইবো । টেনশনে পড়ে গেলাম।

আমার পিতা ছিলেন বাংলাদেশ বেতার, লালমাই, কুমিল্লা কেন্দ্রর একজন সামান্য বেতনভুক্ত সরকারি চাকরি জীবী পাশাপাশি একজন কৃষক। ছাত্র জীবনে পিতার সংসারে গরু ছাগল লালন পালন এবং কৃষি জমি চাষাবাদের পাশাপাশি লেখা পড়া করতাম। সংসারে প্রতিদিন আমি সহ অন্য ভাইদের গরুর জন্য ঘাস কাটতে হতো । মানে প্রতিদিন গরুর জন্য ঘাস কাটা ছিল বাধ্যতামূলক কাজের মতো। ছাত্র জীবন পিতার কঠিন শাসনের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত করেছিলাম। সংসারে পিতার কঠিন বিধি নিষেধ মানতে হতো। যেমন কোন বাড়িতে বা কোন দোকানে গিয়ে টেলিভিশন দেখা ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। গানবাজনা শুনা,আড্ডা দেওয়া, কোথাও ঘুরে বেড়ানো, খেলাধুলা করা বা দেখা ছিল নিষিদ্ধ। পিতার জারিকৃত আইন ভঙ্গ করলে আমাদের কঠোর শাস্তি পেতে হতো। এক কথায় বর্তমানে আফগানিস্তানের তালেবানী শাসনের মতো।

যা হোক একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে গরুর জন্য বেশি করে ঘাস কেটে পিতাকে খুশি করবো এবং কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য ৩০০ টাকা চাইবো। সন্ধ্যার দিকে গরুর সামনে ঘাস এনে রাখলাম পাশে আমার পিতা উপস্থিত ছিলেন। কাজের এক ফাঁকে আমার পিতাকে কক্সবাজার যাওয়ার কথা বলে ৩০০ টাকা চাইলাম। আমার পিতা টাকার কথা শুনে আমাকে গালিগালাজ শুরু করলেন। পিতার কথা শুনে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল এবং কক্সবাজারে আর যাওয়া হলো না।

আমি কর্মজীবনের শুরুতে সরকারি চাকরিতে যোগদান করে ছিলাম। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে আমি খুলনা জেলায় কর্মরত ছিলাম। একদিন অফিস থেকে জানতে পারলাম আমার বদলীর আদেশ হয়েছে কক্সবাজার জেলায়। উক্ত খবর শুনে আমি খুশি হলাম এবং কয়েক দিনের মধ্যে সরকারি ছাড়পত্র নিয়ে কক্সবাজারে যোগদান করলাম।

আজ আমার পিতা বেঁচে নেই কিন্তু আমি সেই কক্সবাজারে আজ প্রায় ১০ বছর অতিবাহিত করছি। দশ বছরে জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র, গুরুত্বপূর্ণ স্থান বা স্থাপনা সমূহ সরকারি খরচে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। পাশাপাশি আমি কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে প্রথম শ্রেণী পেয়ে এম বি এ ডিগ্রী, কক্সবাজার আইন কলেজ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়ে আইন বিষয়ে এল এল বি ডিগ্রী এবং কক্সবাজার থেকে গাড়ি ড্রাইভিং শিখা এবং লাইসেন্স করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। আমার আজ ছাত্রজীবনের সেই আশা পূরণ হয়েছে।

পরিশেষে বলবো দিন শেষে যেমন রাত আসে ঠিক তেমনি আমি ও আজ হয়তো কক্সবাজার থেকে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে। যে কোন দিন আমার বিদায়ের ঘন্টা বাজবে। কক্সবাজার থেকে চলে যাবো ঠিকই কিন্তু আমার জীবনের স্মৃতির পাতায় কক্সবাজার নামটি স্মরনীয় হয়ে থাকবে । সব সময় দোয়া এবং শুভ কামনা থাকবে কক্সবাজারের জন্য। পাশাপাশি পর্যটনে, সৌন্দর্যে এবং উন্নয়নে আরো অনেক এগিয়ে যাবে আমার স্বপ্নের কক্সবাজার এই কামনা রইল।

আন্তরিক শ্রদ্ধান্তে
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন

ফেইজবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ