• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন

সাগরপথে ইয়াবা, পিছনে রাঘববোয়ালরা জড়িত

ডেস্ক নিউজ / ৩৫ ভিউ টাইম
আপডেট : রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

পরে এসব কারণে তাকে এলাকা ছাড়তে হয়। এলাকা ছেড়ে সে বর্তমানে ঢাকার খিলগাঁওয়ে বসবাস শুরু করে। এলাকা ছাড়লেও সে তার ইয়াবার কারবার বন্ধ করেনি বরং তার ইয়াবা কারবারের বিস্তৃতি আরো ছড়াতে থাকে। তালিকার এক নম্বরে থাকা কক্সবাজারের নুরুর সাথে রয়েছে তার সুসম্পর্ক। জানা যায়, ঢাকায় আসলে নুরু মোশারফের বাসায় থাকে। তবে তাদের দুজনের মধ্যকার যোগাযোগ খুবই গোপনীভাবে হয় বলে জানা গেছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে তারা ভিন্ন সিম কার্ড ব্যবহার করে। মোশারফের নেতৃত্বে তার লোকজন ঢাকার ৩০-৪০ টি স্পটে ইয়াবা সরবরাহ করে থাকে। তবে ইয়াবার সাথে কানা মোশারফের সম্পৃক্ততা শুরু হয় মাদক মামলার আসামীদের জামিন করানোর মাধ্যমে। ইয়াবা কিংবা মাদক মামলায যেসব মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়, মোশারফ তাদের জামিন করানোর দায়িত্ব নেয়। মাদক মামলার আসামীদের জামিন করানোর সুবাদে মোশারফও ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। তবে, তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই।

গত ২৩ জুলাই র‌্যাব-৩ রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় ইয়াবা বিক্রির সময় এ সময় তার কাছ থেকে ৭৬৫ পিস ইয়াবা, ১০টি মোবাইল ফোন, দুটি সিম কার্ড, একটি চাকু, একটি মাদক সেবনের পাত্র ও নগদ দুই হাজার ১৬০ টাকাসহ মো. আরিফ ওরফে বাবু নামে একজনকে গ্রেফতার করে। বাবু সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজার থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করতো বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। আটক বাবুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

এছাড়াও র‌্যাব সদস্যরা গত ১৪ মার্চ রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকা থেকে এক লাখ ২৩ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে মো. আলম নামে একজনকে। এর পর জানা যায়, এই আলমের অপর নাম হোসেন আলী। বাড়ী কক্সবাজার জেলার উখিয়ার মহাশফির বিল গ্রামে। এলাকায় ইয়াবার ডিলার হিসেবে পরিচিত। আলম পরিচয়ে কক্সবাজারের কলাতলীতে শামীম হোসেন নামের এক ব্যক্তির ‘শামীম গেস্ট হাউস’ ভাড়া নেন তিনি। পরিচয় দিতেন মাছের পোনা ও জমি কেনাবেচার ব্যবসায়ী হিসেবে। সম্রাট আলম ওরফে হোসেন আলীর সঙ্গে তাঁর ছোট ভাই জসিম উদ্দিন আরমানকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এরকম আরো অনেক ইয়াবা ডিলারের পরিচয়। কক্সবাজারের এসকল ছদ্মবেশী ব্যবসায়ীরা ঢাকায় এসে ইয়াবার বড় ডিলার হয়ে ওঠেন। গত মার্চ মাসেই অভিযানে এমন আরো দুটি সিন্ডিকেট ধরা পড়েছে। ডিএনসির গোয়েন্দারা বলছেন, কক্সবাজারের এসব ছদ্মবেশী ব্যবসায়ীরা ঢাকায় আকাশপথে উড়োজাহাজে করে ইয়াবা নিয়ে আসে। ব্যক্তিগত গাড়ি ও বাসেও কিছু চালান আসে। এসব চালান ঢাকার হোটেলে বসেই বেশির ভাগ হাতবদল হয়। আর কিছু চালান অল্প সময়ের জন্য ভাড়া করা ফ্ল্যাটে বসে লেনদেন হয়।

অন্যদিকে অনুসন্ধানে জামিনে বের হওয়া কক্সবাজারের টেকনাফের অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, কানা মোশারফসহ ঢাকায় ছদ্মবেশে থাকা অনেক ইয়াবা ডিলার তাদের শেল্টার দিয়ে থাকে। তারা জানায়, যারা মাদক পাচার কিংবা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়, কানা মোশারফ তাদের জামিন করিয়ে দেয়।

প্রসঙ্গত, আশির দশকের শেষদিকে দেশে ইয়াবার কারবার শুরু হয়। কিন্তু দেশের মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে ইয়াবা ব্যবসার বিষয়টি আসে ২০০৫ সালের শেষের দিকে। ১৯৯৪ সাল থেকে ইয়াবার চালান মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে ঢাকা আসতে শুরু করে। তখন ইয়াবা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তেমন কিছু জানত না। সে সময় ভারতীয় ফেনসিডিল, পেথেডিন ইনজেকশন, হেরোইন ও গাঁজা পাওয়া যেত। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বর্তমানে শুধু কক্সবাজারেই দুই হাজারের বেশি ব্যক্তি ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত। এ কারবারিদের ৭০ শতাংশ টেকনাফ ও উখিয়ার এবং ৩০ শতাংশ কক্সবাজার সদরের। তাদের মধ্যে কেউ গডফাদার, কেউ পাচারকারী, কেউ আশ্রয়দাতা, কেউ সেবনকারী ও ব্যবসায়ী।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ