• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১১ পূর্বাহ্ন

বিলুপ্তি হচ্ছে পাহাড়ি বনাঞ্চল, রাত’ভর চলে পাহাড় কাটার ধুম,জড়িত স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট

এম ফেরদৌস, উখিয়া / ৩৬ ভিউ টাইম
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী উপদান গাছ গাছালি ভরা পাহাড়ি বনাঞ্চল চোখে পড়ার মতো থাকলেও অল্প সময়ের ব্যবধানে এসব পাহাড়ি বনাঞ্চল ধ্বংস করে সমতলভুমিতে পরিনত করেছে স্থানীয় পাহাড় খেকো প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।

কক্সবাজারের উখিয়ায় প্রত্যান্তঞ্চলে পাহাড়ি বনাঞ্চল প্রায় বিলুপ্তির পথে। এসব রক্ষার্থে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের মধ্যপারিরবিল এলাকায় ঘুরে দেখা যায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাত ১১ টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত পাহাড়ি বনাঞ্চল ধ্বংস করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতের আঁধারে এসব বনাঞ্চল ধ্বংস করে পাহাড়ের মাটি কেটে নিয়ে গেছেন ফয়েজুল ইসলাম ও মামুন নামে দুই ব্যাক্তি।

ফয়েজুল ইসলাম পালংখালী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। মামুন হচ্ছে একই এলাকার আকতার কামালের ছেলে।

এলাকাবাসীর মতে, তারা দুই জনে এলাকার পাহাড়গুলোর ভিন্ন ভিন্ন স্থান হতে পাহাড়ের মাটি খেটে বিভিন্ন ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানে ডাম্পার যোগে টিপ হিসাবে বিক্রি করছে। তারা দুইজন দৃশ্যমান হলেও তাদের সিন্ডিকেটে রয়েছে রাঘববোয়াল। এই রাঘববোয়ালরা অদৃশ্যমান থেকে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করে চলচে বনাঞ্চলের এসব পাহাড় গুলো।

সারা রাত মাটি কাটার যন্ত্রের শব্দে অতিষ্ঠ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এসব পাহাড় নিধনের ফলে এলাকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। বিপর্যস্ত হয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। এ ছাড়া পাহাড়ধসের আশঙ্কাও রয়েছে এই এলাকায় ।

এ বিষয় নিয়ে থাইংখালী দায়িত্বরত বিটকর্মকর্তা বিকাশ দাস বলেন, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তি রাতে চুরি করে মাটি কাটে। আমার সঙ্গীয়ফোর্স নিয় অনেকবার ধাওয়া করেছি। কিন্তু প্রকৃত মালিকদের পায়নি। তবে খুব শীঘ্রই প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হবে।

উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজি শফিউল আলম জানান, পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে উখিয়া রেঞ্জ সর্বদা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। পাহাড় কাটা আগের ছেয়ে এখন অনেকটা কমে আসছে। তবে পালংখালীর বিষয়টা আমরা খতিয়ে দেখছি কারা এসবে জড়িত। সেখানে যতই প্রভাবশালী সিন্ডিকেট হউক না কেন আমরা দেশের প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এখানে শেষ নই, উখিয়া ইনানী রেঞ্জের রাজাপালং বিটের তুতুরিবিল এলাকায়ও দেখা দিয়েছে একই চিত্র। বনাচঞ্চলের পাহাড়ে বন নিধন করে কৃত্রিম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পাহাড়ি মাটিতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি তুলছে একই এলাকার সরওয়ার সিন্ডিকেট। এতে বিলীন হচ্ছে পাহাড়। সেখানেও বিপর্যস্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ। ৪ একর স্কোয়ার ফিট একটি বিশাল পাহাড় এখন সমতল ভুমিতে পরিনত করেছে সরওয়ার সিন্ডিকরা।

এসব বিষয়ে দায়িত্বরত ইনানী রেঞ্জ কর্মকর্তা ফিরোজ আল আমিন ও রাজাপালং বিট কর্মকর্তা মনিছুর রহমানকে গণমাধ্যমকর্মীরা অনেকবার অবগত করেও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

বরং এসব বিষয়ে সংবাদসংগ্রহ করতে গেলে দুইজন সংবাদকর্মী হামলার শিকারও হয়েছে বলে জানা যায়।

বনবিভাগ ইনানী রেঞ্জের কিছু অসাধু কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ হয়ে এসব পাহাড় নিধন কাজে সুযোগ করে দিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

এ নিয়ে রাজাপালং বিট কর্মকর্তা মনিছুর রহমান জানান, সরোয়ার এক সময় পাহাড় খেটেছে কিন্তু এখন কাটে না। বালি তুলছে সত্য সেটি নিয়ে তাকে আমরা সতর্ক করেছি। এবং পরবর্তীতে এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত দেখলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাপার উখিয়ার শাখার সাবেক সভাপতি সাংবাদিক জসিম আজাদ বলেন, উখিয়া এমনিতেই পরিবেশ সংকাটাপন্ন এলাকা, এর মধ্যে বনকর্মকর্তাদের যোগসাজশেই পাহাড়খেকোরা পাহাড় কাটছে, অবৈধভাবে খাল থেকে বালি তুলছে, এসব দেখার কেউ নেই।

পাহাড় কাটা,ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি তুলার দায়ে সরওয়ার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান ইনানী রেঞ্জ কর্মকর্তা ফিরোজ আল আমিন।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ