নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কক্সবাজারে কোস্ট ট্রাস্টের সহায়তায় পরিচালিত সামুদ্রিক শৈবাল চাষ ও বিষমুক্ত শুটকি চাষ সম্প্রসারণে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে গত ১৪ নভেম্বর শুরু হওয়া উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনী দিনে কোস্ট ট্রাস্টের স্টল পরিদর্শন কালে তিনি এ আশ্বাস প্রদান করেন। পরিদর্শন কালে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৮ মিনিট ধরে কোস্টের এ সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মসূচির বিষয়ে খোঁজ খবর নেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সামুদ্রিক শৈবাল চাষ সম্প্রসারণে কোস্টের ভূমিকার প্রশংসা করেন। এছাড়াও তিনি কোস্ট ট্রাস্টের বিষমুক্ত উপায়ে শুটকি উৎপাদন কর্মসূচিটি দেশের অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। এই সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত থাকা সাবেক কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীও সামুদ্রিক শৈবাল চাষ ও বিষমুক্ত শুটকি উৎপাদনের প্রতি বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাাঁদের সঙ্গে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সভাপতি কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ। কোস্ট ট্রাস্টের উপ পরিচালক তারিক সাঈদ হারুন এই সময় কোস্ট ট্রাস্টের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্বন্ধে প্রধানমন্ত্রীসহ অতিথিবৃন্দকে অবহিত করেন।
এর আগে সাত দিনব্যাপী পিকেএসএফ উন্নয়ন মেলা-২০১৯ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পিকেএসএফের সহযোগী সংস্থা, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গবেষণা ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১৩০টি প্রতিষ্ঠান এই মেলায় অংশ নিচ্ছে, এবং এতে আছে ১৯০টি স্টল। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের উৎপাদিত পণ্যপ্রদর্শনী ও বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, কোস্ট ট্রাস্ট পিকেএসএফ’র সহযোগিতায় কক্সবাজারে সামুদ্রিক শৈবাল এবং বিষমুক্ত শুটকি চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছে। এ জন্য কোস্ট উৎপাদকদের উদ্বুদ্ধ করণ, দল গঠন, প্রশিক্ষণ, কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা করছে। উৎপাদিত শুটকি এবং শৈবাল বাজারজাতকরণেও কোস্ট সহযোগিতা করছে। সাধারণ শুটকি উৎপাদনে মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন কীটনাশক ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়, কিন্তু কোস্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৩০০ জন উৎপাদক কীটনাশক বা কোন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার না করেই, সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক ও প্রাকৃতিক উপায়ে শুটকি উৎপাদন করছেন। তাঁরা শুটকি শুকানোর স্বয়ংক্রিয় মেশিন ব্যবহার করে এবং কীটনাশকের বদলে হলুদ দিয়ে শুটকি উৎপাদন করছেন, যা মানব দেহের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর বলে বিসিএসআইএর পরীক্ষায় প্রমাণিত।
অন্যদিকে দেশের বর্ধিত জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা ও বিকল্প পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা পূরণে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে সামুদ্রিক শৈবাল। বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্র এলাকায় সামুদ্রিক শৈবালের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি বাগদা চিংড়ি চাষের সঙ্গে সমন্বিতভাবেও চাষ করা সম্ভব। সামুদ্রিক শৈবাল আয়রন, আয়োডিন, খণিজ লবণ ও ক্যারোটিন সমৃদ্ধ এক ধরনের সবজি যা শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়, বয়স্কদের বাড়তি পুষ্টির যোগান দেয় এবং আয়োডিনের অভাব পুরণ করে। শৈবাল শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা হ্রাস করে। কোস্ট ট্রাস্ট পিকেএসএফ’র আর্থিক সহায়তায় কক্সবাজার জেলার সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শৈবাল চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে শৈবাল চাষীদের আয়বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে যার আওতায় প্রায় ২০০ জন চাষী শৈবাল চাষ করছে। কোস্ট ট্রাস্ট শৈবালকে মানুষের খাবার টেবিলে পৌঁছে দিতে নানা রকম উদ্দীপনামূলক কাজ করছে। শৈবাল বাজারজাতকরণ ও জনপ্রিয় করার জন্যও কোস্ট কাজ করছে।