• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন

দুই সহোদর ভাইয়ের নিয়ন্ত্রনে খরুলিয়ার ইয়াবা সিন্ডিকেট! প্রকাশ্যে ইয়াবা ব্যবসা

নিউজ রুম / ১৮৬ ভিউ টাইম
আপডেট : শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৯

[ মোঃ নাজিম উদ্দিন ]

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ইয়াবা ব্যবসার উর্বর ভূমি সদরের খরুলিয়া। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এখানকার ঘরে ঘরে বিস্তার লাভ করেছে ইয়াবা ব্যবসা। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাত ধরে মরণব্যাধি এ মাদকের বিস্তার ঘটেছে। এদের কেউ কেউ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গডফাদার। আবার কেউ কেউ নিজে সেবনসহ খুচরা ব্যাবসায়ীদের পাইকারী বিক্রি করে। তাদেরই একটা অংশ সরাসরি ইয়াবার বড় বড় চালানগুলোর অন্যতম রানা-রাশেদের সঙ্গেই জড়িত বলে জানা যায়।

চলতি বছরের রমজানের শুরু থেকেই সারা দেশব্যাপী মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে এনকাউন্টারে এক ডজন মাদক ব্যবসায়ী নিহত, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। মাদকের স্বর্গরাজ্য খরুলিয়ায় উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। খরুলিয়া সচেতক মহলের দাবি, এ এলাকায় শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। যারা ইয়াবা ও মাদক সেবন, বাজারজাতকরণ ও পাচারকাজে জড়িত।

এই এলাকায় রানা-রাশেদ দুই সহোদর ভাই, নানা ফন্দি এটে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। বেশ কিছুদিন আত্নগোপনে গেলেও এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা দুই ভাই। তাদেরই পার্টনার গত মাসাধিককাল পূর্বে সরকার পূর্ব ঘোষিত মাদক নির্মূলের অংশ হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথিত বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী রাজামিয়া।

পুরনো মাদক ব্যবসায়ী রানার নেতৃত্বে বিরামহীন পাচার যজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে তার আপন ছোট ভাই রাশেদ। রাজামিয়া নিহত হওয়ার পর তারা বেশ কিছুদিন আত্নগোপনে গেলেও ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেছে পুরনো কায়দায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী ফাঁকি দিয়ে ব্যবসার ধরণ পাল্টিয়ে সিন্ডিকেটভুক্তরা একেক সময় একেক রকম অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে তাদের দুই ভাইয়ের সিন্ডিকেট।

প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরে বেড়াচ্ছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর নাকের ডগায় তেমনি কক্সবাজার সদরের খরুলিয়ার ইয়াবার ভাই সিন্ডিকেট খ্যাত রাশেদ-রানা। আনাড়ি ও বেকার থেকে ইয়াবার উছিলায় কোটিপতি বনেছে তারা। ইয়াবা পাচারের মামলা থেকে রক্ষা এবং ইয়াবার “তকমা” লোকাতে লাখ টাকার মিশন নিয়ে পুলিশের নিকট না গেলেও দালাল-ফড়িয়ার দারস্থ হয়েছে। তারা দুই ভাইয়ের মত অন্যান্য এলাকায় ও খরুলিয়া বাজার কেন্দ্রিক ইয়াবার রমরমা ব্যবসা চালিয়ে গেলেও দেখার কেউ নেই।

ফলে পুরনো এই মাদক ব্যবসায়ীরা স্থানীয় ইয়াবা মহাজনদের সাথে গড়ে তুলেছে চোরাই ব্যবসার সিন্ডিকেট। রাশেদ-রানার সিন্ডিকেট ইয়াবা, সোনা চোরাচালানসহ নানা ব্যবসা চালিয়ে গেলেও সরকারের নিয়মনীতি তোয়াক্কা করছেনা। স্থানীয় পাচারকারী সিন্ডিকেটের সাথে আতাঁত করে এখন ইয়াবা ডিলার হিসেবে দায়ীত্ব পালন করছে রাশেদ-রানা।

তাদের সাথে একাধিক স্ত্রী ইয়াবা ব্যবসার টাকা আদান-প্রদানে সহযোগিতা করছে। দুই ভাইয়ের ইয়াবা সিন্ডিকেট খরুলিয়া হয়ে ঢাকা, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার কেন্দ্রিক ইয়াবা সরবরাহ, বিক্রি, টাকা গ্রহণে রয়েছে সিন্ডিকেটভুক্ত আত্বীয়-স্বজন। আড়াঁলে তাদের ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা ও অর্থযোগান, কক্সবাজার ভিত্তিক তাদের ফুঁফার সাথে যোগসূত্রসহ বহুমুখী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে অবাধে। তাদের ব্যবসার হাল ধরতে গিয়ে খরুলিয়ার টেক এলাকার ডেকোরেশন আবছার (ইয়াবা ডিলার) সিন্ডিকেট হিসেবে কুখ্যাতি লাভ করেছে।

স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থেকে সরকার বিরোধী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে রাশেদ-রানা। তারা গত কয়েক বছর আগেও তারা দুজন দরিদ্র বেকার ও আনাড়ি যুবক। নয়াপাড়া ও বাজারপাড়ার স্থানীয় ইয়াবা সিন্ডিকেটের হয়ে ইয়াবা পাচার, হুন্ডির টাকা বহনের দায়ীত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেকে ইয়াবার বিশাল সাম্রাজ্যে জড়ান রাশেদ ও রানা। ফলে দিন দিন তাদের ইয়াবা ব্যবসা ছাড়াও অবৈধ ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে সদর থানাসহ বিভিন্ন থানায় ইয়াবা পাচারের মামলা রয়েছে।

তাদের এক সহযোগী ইয়াবা সহ রামু থানা পুলিশের হাতে আটক হয়ে কক্সবাজার কারাগারে রয়েছে। ওই মামলার পলাতক আসামী রাশেদ। এক সময়ের বেকার, ইয়াবা ব্যবসায় শুন্য থেকে কোটিপতি বনেছে। ১ম স্ত্রী রোহিঙ্গা ছাড়াও কুমিল্লার এক মহিলাকে বিয়ে করে সেখানে বসতি গড়ে তুলেছে। মুলত রানার সাথে কলাতলীর চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীর সাথে ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসার সিন্ডিকেট এক যুগ আগে থেকেই শুরু। আর রানা-রাশেদ ইয়াবা ডিলার হিসেবে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় ফ্লাট, সুদী ব্যবসায় লাখ-লাখ টাকা বিনিয়োগ ছাড়াও আত্বীয়দের মাধ্যমে নামে-বেনামে ক্রয় বহু সম্পদ। যে সম্পদ আত্নীয় স্বজনরা দেখভাল করে থাকে। অপর দিকে ইয়াবা দেলোয়ার, সাদ্দামের পাচার করা চোরাই পণ্যে খরুলিয়া বাজার সয়লাব হয়ে গেছে।

ডেইঙ্গাপাড়ার কুখ্যাত মাদক সম্রাট ছাইদুল তাদের ছত্রছায়া গড়ে তুলেছে চোরাচালানের নতুন সিন্ডিকেট। যে সিন্ডিকেটে বাজারপাড়ার দেলোয়ারসহ আরো কয়েকজন পেশাদার চোরাকারবারি রয়েছে। এখন ইয়াবা ছাইদুল ও রানা-রাশেদদের সিন্ডিকেট নতুন করে হুন্ডির মাধ্যমে ইয়াবা, চোরাচালান, মানব পাচারের সকল টাকার লেনদেন করে যাচ্ছে।

স্থানীয় ইউপির জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা দুই ভাই এদেশের আইনকানুন কে তোয়াক্কা করছেনা। নিজেরাই যেমন ইচ্ছে বৈধ-অবৈধ সব ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। রানা-রাশেদের অবৈধ ব্যবসার কারণে বার বার খরুলিয়ার ভার্বমুতি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবী করেন, কলঘর বাজারের বিকাশ ব্যবসায়ীদের আটক করা হলে সমস্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীসহ প্রতি মাসে কত পরিমাণ ইয়াবা ব্যবসার টাকা লেনদেন হচ্ছে তা বেরিয়ে আসবে।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ