• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫০ পূর্বাহ্ন

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতিচ্ছবি, মসজিদের পাশে পূজামণ্ডপ

নিউজ রুম / ১৮২ ভিউ টাইম
আপডেট : শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৯

 

ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে পূজা শুরু

জসীম উদ্দীন

ষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে শুক্রবার (৪) অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা।পূজার এবারের থিম- জন্মভূমি জগৎ মাতা। লাল সবুজের পতাকার বুকে আর পদ্ম ফুলের উপর মা দুর্গাকে রাখা হয়েছে। দুর্গার চারপাশে গ্রাম বাংলার চিরাচরিত রূপ ফুটিয়ে তুলেছে শিল্পীরা। জন্মভূমি ও জগৎ মাতা এই আদলে তৈরি করা হয়েছে পূজামণ্ডপ।

শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে দু’লক্ষাধিক সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবের আমেজ। এ বছর কক্সবাজার জেলায় ২৯৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।এর মধ্যে ১৪১টি প্রতিমা ও ১৫৫টি ঘটপূজা।আগামী (৯) অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিন বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বির্সজনের মধ্যদিয় শেষ হবে ৪দিনের দুর্গোৎসব।

কক্সবাজার জেলার বেশিভাগ স্থানে পাশাপাশি বসবাসের কারনে মসজিদের পাশেই তৈরি হয়েছে পূজা মণ্ডপ।মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ যখন নামাজ আদায়ে মসজিদে,ঠিক তখনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন পূজা দিতে ব্যাস্ত মসজিদের পাশেই মণ্ডপে। পূজা শুরুর প্রথমদিনে মাগরিব ও এশার সময় এমন সুন্দর সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেখাগেছে জেলার বিভিন্ন স্থানে।

পর্যটন শহর কক্সবাজারের কালীবাড়ি পূজা মণ্ডপের ঠিক সামনে পৌরসভা মসজিদ আর পেছনে বদর মোকামের মত বড় জামেমসজিদের অবস্থান।সেখানেও দেখা গেছে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরস্পরের ভালোবসার নির্দশন।

হিন্দু মুসলিম, পরস্পরের মধ্যে নেই কোন হৈ চৈ,বাড়াবাড়ি কিংবা বাকবিতণ্ডা। বরং হিন্দু মুসলিম পরস্পর একে অপরকে বাড়িয়ে দিচ্ছে সহযোগীতার হাত।এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতিচ্ছবি।জাতীয় কবি কাজী নজরুল ও বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ এর স্বপ্নের দেশ, ও বাঙালি পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ।

কক্সবাজারের সদরের ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ জালালাবাদ, ঝিলংজা ইউনিয়নসহ অনেক ইউনিয়ন হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়িক হাজারো মানুষের একই গ্রামে পাশাপাশি বসবাস সে অাবহমান কাল থেকে। তাই বরাবরের মত এবারেও সেসব এলাকা গুলোতে মসজিদের পাশেই তৈরি হয়েছে পূজার মণ্ডপ।স্ব -স্ব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের সমাজ প্রধানদের মতে,পৃথিবীর বুকে এক মাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব,এমন সুন্দর সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন। জেলার বিভিন্ন উপজেলা গুলোতেও একেই চিত্র।

ঝিলংজা ইউনিয়েন চেয়ারম্যান টিপু সলতান ও ঈদগাঁও’র চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম নিজ নিজ ইউনিয়নের সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখার জন্য দেশবাসীকে আমন্ত্রণ জানান।তারা দু’জনে জানান, উভয় ইউনিয়নের মসজিদের পাশাপাশি অনেক পূজার মণ্ডপ তৈরি হয়েছে এবং শান্তি শৃঙ্খলা মেনে হচ্ছে পূজা আর নামাজ আদায়। এ সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এটিকে তারা বাংলাদেশ ও শেখহাসিনা সরকারের সফলতা হিসেবে দেখছেন।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা কেন্দ্রীয় জামেমসজিদ ও উপজেলা কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপের পাশাপাশি অবস্থান শতবছর ধরে।
উপজেলা উদযাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্র দাস বলেন,উখিয়া কেন্দ্রীয় জামেমসজিদ ও উখিয়া কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপের পাশাপাশি পথ চলার শত বছরের মধ্যেও আজকের দিন পর্যন্ত উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এবিষয়ে কোন টু শব্দ হয়নি।বরং আমরা একে অপরের জন্য সহযোগী হয়ে কাজ করেছি। মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারাও একই কথা বলেছেন।

কক্সবাজার বদর মোকাম জামেমসজিদের ইমাম ও খতিব মৌলানা আবদুল খালেক নেজামী বলেন, আমাদের দেশ সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমাদের থেকে বিশ্ববাসীর অনেক শিখার আছে, বিশেষ করে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির। তিনি বলেন,ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে আল্লাহর রাসুল( স:) নিষেধ করেছেন। আর বাংলার মানুষ সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে এ ভাবে সুখে শান্তিতে থাকতে বিশ্বাসী। এসময় বাংলাদেশ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট রনজিত দাশ বলেন, অনেক মসজিদের খুব কাছেই রয়েছে আমাদের পূজামণ্ডপ।তিনি বলেন, আযানের অন্তত আধাঘণ্টা আগে গানবাজনা, মাইক এবং সাউন্ড হয় এমন সব কিছু বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া আছে পূযা উদযাপন কমিটির পক্ষথেকে।আর মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ আমাদেরকে কোন ধরনের অসহযোগীতামূল আচরণ করেননি। রনজিত দাশ আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশে হিংসা হানাহানির কোন সুযোগ নেই।

এদিকে দুর্গোৎসবকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম জানান-জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিমা তৈরি এবং মণ্ডপগুলোকে ঘিরে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পোষাকধারী পুলিশ, আনসার, গোয়েন্দা পুলিশ দিয়ে প্রতিটি পূজা মন্ডপ আগলে রাখার পাশাপাশি বিসর্জনের দিন সৈকত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ