• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন

এবার মুখ খুললেন বাংলাদেশে আসা পাকিস্তানি নারীর দাবি করা স্বামী

ডেক্স নিউজ / ৩৮ ভিউ টাইম
আপডেট : শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৩

‘মাহা বাজোয়া এখন আমার নেই। সে আমার সঙ্গে প্রতারণা করছে। আমি তাকে ১৯ মাস পূর্বে ডিভোর্স দিয়েছি’। স্বামীর খোঁজে বাংলাদেশে আসা পাকিস্তানি নারী মাহা বাজোয়ার কথা তুলতেই এভাবে জবাব দিলেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা পৌরসভার উত্তর বাজার বড়াইলের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার। পাকিস্তানি নারী মাহা বাজোয়ার দাবি করা স্বামী সাজ্জাদ আক্ষেপ করেই কথাগুলো বলেছেন। তালাকের ১৯ মাস পর পাকিস্তানি নারীকে জড়িয়ে তাকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশে বিব্রত হন। অসুস্থতার অজুহাতে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করছেন সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার। কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন সাজ্জাদ।
তবে তিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে রাজি হননি। নানা কারণে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি বিরূপ ধারণার কথা জানালেন।

কেন বিরূপ ধারণা সে সম্পর্কে সাজ্জাদ হোসেন বললেন, কয়েক দিন ধরে আমার বক্তব্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে বিভিন্ন গণমাধ্যম; এসব কথা আমি একবারও বলিনি এবং যার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিন সম্পর্কই নেই, তাকে নিয়ে কেন হঠাৎ কথা বলব। সংবাদ প্রকাশের আগে কেউ আমার মতামত জানার চেষ্টা করেনি। অথচ সবাই আমার স্ত্রী সন্তান বলে আমার বক্তব্য না নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমার পরিবার থেকে জানানো হয়েছে আমি পাকিস্তানি নারীকে আইন অনুযায়ী বিগত প্রায় পৌনে দুবছর পূর্বে তালাক দিয়েছি এবং তার গর্ভের আমার কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি। জান্নাত নামে বাচ্চাটি তার পূর্বের স্বামী পাকিস্তানের নাছিরের। তার পরও গণমাধ্যমে আমার স্ত্রী সন্তান বলে বাচ্চার ছবি প্রচার করা হচ্ছে।

সাজ্জাদ হোসেন মজুমদারের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, জীবিকা নির্বাহের জন্য ২০০৮ সালে আরব আমিরাতে গাড়িচালক হিসেবে কাজে যোগ দেন। পরে কাজের সুবাদে একটি মার্কেটে গিয়ে ২০১৪ সালের শুরুতে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে পাকিস্তানে লাহোর প্রদেশের মুলতান রোডের সাকি স্ট্রিট সৈয়দপুরের বাসিন্দা মাকছুদ আহমেদ ও শামীমা আক্তারের মেয়ে মাহা বাজোয়ার সঙ্গে। এক পর্যায়ে একে অপরকে কাছে পেতে ব্যাকুল হয়ে উঠেন। অবশেষে তাদের প্রেম বিয়েতে রূপ নেয়।

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর তারা পাকিস্তানে গিয়ে ওই দেশের নিয়ম অনুযায়ী দুই লাখ দেনমোহরে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা বিভিন্ন দেশ বিদেশে বিভিন্ন স্থানে প্রমোদভ্রমণ করেন। পাকিস্তানি নারীর কোনো আবদার অপূরণ রাখেননি সাজ্জাদ। তার স্ত্রীর সব আবদার পূরণ করেন। সাজ্জাদ হোসেনের দুবাইয়ে উপার্জিত টাকা নিয়ে মাহা বাজোয়া পাকিস্তানের লাহোরে জমি কেনেন। পরে ওই জমিতে বিলাসবহুল বাড়ি করেন।

পরবর্তীতে বিপুল টাকা খরচ করে ২০১৮ সালে স্ত্রী মাহা বাজোয়াকে বাংলাদেশে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেখানে এসে বাংলাদেশের রীতিনীতি অনুযায়ী এক লাখ টাকা ধার্য করে কাবিন রেজিস্টারি করেন। বিয়ের ২০ দিন অবস্থান করেন মাহা বাজোয়া। পরে নিজ দেশে চলে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করলে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুরোধ করেন সাজ্জাদ। এতে মাহা বাজোয়া অনীহা প্রকাশ করেন। পরে কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে স্ত্রী মাহা বাজোয়াকে পাকিস্তানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এবং সাজ্জাদ হতাশা নিয়ে নিজ কর্মস্থল ফের দুবাই চলে যান।

দীর্ঘ ৭ বছর মান অভিমানেই চলছিলো সাজ্জাদ ও মাহা বাজোয়ার দাম্পত্য জীবন। বাংলাদেশে এসে পাকিস্তান চলে যাওয়ার পর মাহার মন পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। পরে মাহার খোঁজে সাজ্জাদ পাকিস্তানে যান।

সেখানে গিয়ে জানতে পারেন মাহা বাজোয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিয়ের ৭ বছর পর সাজ্জাদ জানতে পারেন মাহা পাকিস্তানের পেশোয়ার রাজ্যে আরেকটি স্বামী ও সন্তান আছে। লাহোরে খোঁজ নিয়ে দেখেন সত্যিই পেশোয়ারে নাছির নামের এক ব্যক্তিকে ২০১২ সালে বিয়ে করেন মাহা বাজোয়া এবং জান্নাত নামে কন্যা আছে। প্রতারণা করে পূর্বের স্বামী সন্তানের কথা গোপন রেখে সত্যকে আড়াল করে দ্বিতীয় বিয়ে করা নিয়ে তাদের মধ্যে চলে পারিবারিক কলহ।

এর মধ্যে পাকিস্তানি নারী সাজ্জাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে সুকৌশলে পাকিস্তানে একটি বাড়ি ও অর্থকড়ি, স্বর্ণালংকার বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেন। পাকিস্তানি নারীকে সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে নিঃস্ব যুবক সাজ্জাদ অবশেষে প্রতারিত হয়ে দেশে ফিরেন। সবকিছু সহ্য করেও মাহ বাজোয়াকে বাংলাদেশে আসার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু মাহা তার কথার অমান্য করে সাজ্জাদকে পিতা মাতা ছেড়ে পাকিস্তানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চাপপ্রয়োগ করেন।

এনিয়ে উভয়ের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে স্ত্রী মাহা বাজোয়াকে ২০২২ সালের ২৩ মে তালাক দেন। এদিকে তালাকের খবর পেয়ে গত ১৭ নভেম্বর পাকিস্তান থেকে ঢাকায় এসে এক আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে গত ৮ ডিসেম্বর সাবেক স্বামীর বাড়ি চুনারুঘাটের বাড়াইলে আসেন। সেখানে তার স্বামী সাজ্জাদকে না পেয়ে সাজ্জাদের ভাবির বাসায় অবস্থান করেন।

পরে মাহা বাজোয়া চুনারুঘাটের ঠিকানা দেখিয়ে সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে গত ১২ ডিসেম্বর হবিগঞ্জে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালতের বিচারক রাহেলা পারভীন সাজ্জাদ হোসেন মজুমদারের বিরুদ্ধে সমন ইস্যুর আদেশ দেন। মামলাটি হয় যৌতুক আইনের ৩ ধারায়। পরে গত ১৩ ডিসেম্বর আইনজীবীর পরামর্শে পারিবারিক আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

সর্বশেষ ১৪ ডিসেম্বর রাতে মারপিটের অভিযোগে চুনারুঘাট থানায় মাহা বাজোয়া বাদী হয়ে সাজ্জাদ হোসেন মজুমদারকে প্রধান আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় তার বড় বোন শাহনাজ বেগম মনি, তার স্বামী মো. মনসুর আহমেদ ও তার বর্তমান স্ত্রী মুন্নি আক্তারের নাম উল্লেখ করেন।

মাহা বাজোয়ার দাবি এ তালাক আইনসম্মত নয় এবং তিনি তালাক সংক্রান্ত কোনো নোটিশ পাননি বলে জানিয়ে স্বামীর অধিকার আদায়ে মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে স্বামীকে চাই।

মাহা আরও জানান, তিনি ঢাকায় চলে যাবেন। সেখানে বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকবেন। ১৯ ডিসেম্বর পাকিস্তান চলে যেতে পারেন। পরে মামলার জন্য আবারো তিনি হবিগঞ্জে আসবেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, পাকিস্তানে লাহোর প্রদেশের মুলতান রোডের সাকি স্ট্রিট সৈয়দপুরের বাসিন্দা মকসুদ আহমেদের মেয়ে মাহা বাজোয়ার সঙ্গে ১০ বছর আগে দুবাইয়ে চুনারুঘাট উপজেলার উত্তর বাজার বড়াইলের সফিউল্লা মজুমদারের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন মজুমদারের পরিচয় হয়। পরে তারা ৩০ লাখ পাকা দেনমোহরে বিয়েও করেন।

কিন্তু সাজ্জাদের দাবি, ২ লাখ টাকার কাবিনে এডিট করে ৩০ লাখ বানিয়ে ওই পাকিস্তানি নারী আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা দায়ের করেন এবং পূর্বের স্বামীর সন্তানকে আমার বলে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমি বাড়িতে নেই। এ সুযোগে একটি কুচক্রী মহলের সহায়তায় আমার বাড়িতে গিয়ে ৩টি নাটকীয় মামলা দায়ের করেছেন মাহা। আমার ডকুমেন্টস রয়েছে। আমি আইনিভাবে মোকাবেলা করবে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে মাহা বাজোয়া সাজ্জাদ হোসেন মজুমদারকে স্বামী দাবি করে এবং স্পন্সরকারী হিসেবে বাংলাদেশ আসতে চান। এনিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সংশ্লিষ্ট থানাকে তদন্তের দায়িত্ব দেন।

পরবর্তীতে থানার উপপরিদর্শক এসআই লিটন রায় সাজ্জাদের কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, মাহা বাজোয়া সাজ্জাদের তালাকপ্রাপ্ত। তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। এ সংক্রান্ত ২০২২ সালের গত ১৪ জুলাই হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করলে ঘটনা প্রকাশ পায় এবং মাহা বাজোয়া তখন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেননি।

এ বিষয়ে চুনারুঘাট থানার ওসি হিল্লোল রায় জানান, পাকিস্তানি নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে আমরা কাজ করছি।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ