• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৮ পূর্বাহ্ন

আমানতের টাকা হাতিয়ে কক্সবাজারে রেডিসন ব্লু, বান্দরবানে রিসোর্ট!

নিউজ রুম / ১৮৩ ভিউ টাইম
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৯

ডেস্ক,

কক্সবাজারের হোটেল রেডিসন ব্লু এবং বান্দরবানের রিসোর্ট চলছে পিপলস লিজিং থেকে আত্মসাৎ করা টাকায়। পিপলস লিজিংয়ে আমানতের বিপরীতে কাগজেকলমে ৩ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার সম্পদ দেখানো হলেও বাস্তবে তার তিন ভাগের এক ভাগও নেই। এমন অভিযোগ করেছেন দেউলিয়া হয়ে যাওয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের। পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের প্রায় সব টাকাই পরিচালকরা সরিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ আমানতকারীদের।

পিপলস লিজিংয়ের পরিচালক উজ্জ্বল কুমার নন্দীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আমানতকারীরা বলেছেন, তিনি আমানতকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে বিনিয়োগ করেছেন কক্সবাজারের হোটেল রেডিসন ব্লুতে। রেডিসন ব্লুর বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ক্লেউইসটন ফুডস এন্ড অ্যাকোমাডেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী। অন্যদিকে আরেক পরিচালক নোয়াং চো মং আমানতকারীদের টাকা মেরে বান্দরবানে চালাচ্ছেন বিলাসবহুল রিসোর্ট— ফরেস্ট হিল রিসোর্ট। নোয়াং চো মংয়ের বাড়িও বান্দরবানের মধ্যমপাড়া মারমা বাজারে।

এতো অভিযোগ উঠলেও তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ বা ফ্রিজ করা হয়নি। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি— এমন অভিযোগ আমানতকারীদের।পিপলস লিজিং সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অনুমোদন পায়। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এই প্রতিষ্ঠানটির অডিট হয়েছে ছয় মাস পর পর কিংবা বছর বছর। প্রতিষ্ঠানটির মনিটরিংয়ের দায়িত্বে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু আমানতকারীদের অভিযোগ, বাংলাদেশ ব্যাংক এক্ষেত্রে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।

পিপলস লিজিংয়ের বর্তমান আমানত ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। বাকি ৭০০ কোটি টাকা ৬ হাজার ব্যক্তি শ্রেণীর আমানত। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি থেকে ঋণ নেওয়া অর্থের পরিমাণ এক হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। এটি মোট ঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বড় অংশই নিয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা। ধারাবাহিকভাবে লোকসানের কারণে ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি লভ্যাংশ দিতে পারছে না।

গত ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের আবেদন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৬ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করে। এরপর ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে। এর তিন দিন পর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফসিএলি) ২০১৫ সাল থেকে পরবর্তী চার বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস কোম্পানিকে।
এদিকে সোমবার (১৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করেন পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। এরা হলেন সামিয়া বিনতে মাহবুব, কামাল আহমেদ, রানা ঘোষ, প্রশান্ত কুমার দাস ও আনোয়ারুল হক। জানা গেছে, বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। আমানতকারীরা কবে নাগাদ টাকা ফেরত পাবে, তার কোনো সময়সীমা দিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আনুপাতিক হারে টাকা ফেরত দেওয়া এবং জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার কথা জানিয়েছেন


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ