অনলাইন ডেস্ক
লাগাম ছাড়া বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয়। মেয়াদ পার করে প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের ডিজাইন পরিবর্তনে ব্যয় বাড়ানো হয়। আর প্রকল্পের পণ্য কেনাকাটায় একক পণ্য মূল্যের অঙ্ক দেখলেই চোখ ছানাবড়া হওয়ার অবস্থা।ঢাকা শহরের রাস্তায় প্রতিটি এলইডি বাতি স্থাপনে খরচ ধরা হয়েছে ৬৪ হাজার ৮৫৪ টাকা। যেখানে ছয় কোটি টাকা ধরা হয়েছিল ধূপখোলা শিশুপার্ক উন্নয়নে, সেখানে সেই ব্যয় ৭৪ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
আর জনপ্রতি বিদেশে প্রশিক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২ লাখ টাকা। সার্বিকভাবে চলমান ঢাকা দক্ষিণ সিটির এই অবকাঠামো প্রকল্পে ব্যয় ৫১৭ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার একনেক সভায় এই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবনার ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক হাজার ২০২ কোটি ৪৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ডিএসসিসির ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা, ফুটপাথসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা উন্নয়নের জন্য ২০১৬ সালে প্রকল্প নেয়া হয়।
তিন বছর পার করে এই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হলো ৫১৭ কোটি টাকা। রাস্তাগুলো আলোকিত করার জন্য ৪৪ হাজার ৫৯৮টি এলইডি লাইট কিনে তা স্থাপন করা হবে। আর এই কাজে প্রতিটি লাইটের জন্য ব্যয় হবে ৬৪ হাজার ৮৫৪ টাকা। ফলে এই লাইট স্থাপনেই মোট ব্যয় ২৮৯ কোটি ২৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
এখানে ১৮টি পার্ক ও ১১টি প্লে গ্রাউন্ড উন্নয়নে ব্যয় বাড়িয়ে ৪২২ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। যেখানে গড়ে প্রতিটির ব্যয় হবে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর বাইরে আলাদা করে ৭.৮২ একরের ধূপখোলা শিশুপার্ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় প্রথমে ছয় কোটি দুই লাখ টাকা। আয়তন অপরিবর্তিত থাকলেও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
ফলে এই শিশুপার্কের উন্নয়নেই খরচ হবে ৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। পাঁচটি এলাকায় ১১টি ক্লিনার কলোনি স্থাপনে ব্যয় ধরা হয় ৯৪ কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। সেখানে ব্যয় সাড়ে ২২ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে প্রতিটি কলোনি নির্মাণে খরচ হবে ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকাবিদেশে ৩০ জন জনবলকে প্রশিক্ষণে পাঠানো হবে। তাতে মাথাপিছু ৩২ লাখ টাকা করে মোট তিন কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আর স্থানীয় প্রশিক্ষণে ১০ জনের জন্য ১০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
এখানে মাথাপিছু খরচ এক লাখ টাকা। নতুন করে খাত যুক্ত করা হয়েছে, ধানমন্ডি লেক সংস্কারের জন্য ১৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা, নতুন নগর ভবনের জন্য ৫২ কোটি ৪৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা।প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, রাস্তা, ফুটপাথ, ড্রেন অবকাঠামোতে ব্যয় হবে ১৯৪ কোটি ৫২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। শান্তিনগর, রাজারবাগ ও মালিবাগের জলাবদ্ধতা দূর করতে ব্যয় হবে ৮৮ কোটি ৯৫ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ছোট-বড় মিলে ১৩টি বর্জ্য ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপন করা হবে।
হাজারীবাগ ও কাপ্তান বাজারে দু’টি কসাইখানা নির্মাণে খরচ ধরা হয় প্রথমে ১১৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা, সেটি এখন বৃদ্ধি করে ১৬২ কোটি ৫১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।তিনটি কবরস্থান উন্নয়ন ব্যয় প্রায় ৮০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে এখন ১২৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। ডিএসসিসির তথ্যানুযায়ী এই প্রকল্পে নির্ধারিত তিন বছরে কাজের অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। এতে ব্যয় হয়েছে ৭৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
সিটি করপোরেশন বলছে, খেলার মাঠ উন্নয়ন কাজের ড্রইং ও ডিজাইন পরিবর্তন, কসাইখানা নির্মাণের প্রকল্প সাইট বুঝে নিতে দেরি, ফুটওভার ব্রিজ, ধূপখোলা শিশুপার্ক নির্মাণের ডিজাইন পরিবর্তন ও প্রণয়নে বিলম্ব এবং ক্লিনার কলোনি ভবন নির্মাণ কাজে বিলম্ব হওয়াতে নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পোস্তাগোলা আর্মি ক্যাম্প ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায় এলইডি বাতি স্থাপন এবং নগর ভবন ও ধানমন্ডি লেক সংস্কারের জন্য নতুন করে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো: জাফর আহমেদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে আধাঘণ্টা পর ফোন করার জন্য বলেন। এরপর তাকে ফোনে আর পাওয়া যায়নি।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: আসাদুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। নির্বাহী প্রকৌশলীর (বিদ্যুৎ) সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন। কিন্তু জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়কে কয়েক দফা ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
সূত্রঃ বিডিবার্তা২৪.কম।