• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ০৫:২০ অপরাহ্ন

সম্পদ কাজে লাগল না প্রদীপের, দেখতে আসেনি স্ত্রী-সন্তানও

চ্যানেল কক্স ডেস্ক / ১৮ ভিউ টাইম
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

চট্টগ্রামের পাথরঘাটার মোড়ের কোতোয়ালি থানা থেকে শপাঁচেক গজ দূরের বাড়িটির নাম ‘লক্ষ্মীকুঞ্জ’। ঘিয়ে রঙের মাঝে লাল ইটের নকশা কাটা ছয়তলা এই ভবনের গেটে ‘বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ’ লেখা বোর্ড ঝোলানো। দারোয়ান বলেন, ‘দালান ইবার এটার মালিক ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি। ঘটনার পরত্তুন জামাইরে রাইয়েরে বউ পালাই গেইয়ে। জামাই ওসিরও এহন ফাঁসি অইয়ে পাল্লার। এইল্লা ধন-সম্পত্তি গরিয়েরে লাভ কী?’

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় ফাঁসির রায় হওয়া পুলিশের সাবেক ওসি প্রদীপ দাশের পাথরঘাটার বাড়িতে এখন সুনসান নীরবতা। একই অবস্থা বোয়ালখালীর তার পৈতৃক বাড়িতেও। প্রদীপে পাশে কেউ নেই। গত বছরের আগস্টে তিনি কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই স্ত্রী চুমকি কারণ পলাতক রয়েছেন। প্রদীপকে কারাগারে বা আদালতে একবারের জন্যও দেখতে যায়নি স্ত্রী-সন্তান।

ওসি প্রদীপের গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালীর সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর কঞ্জুরি গ্রামে। এই বাড়িতে থাকেন তার তিন সৎভাই। বোয়ালখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রদীপের বড় ভাই রঞ্জিত দাশ বোয়ালখালীতে চায়ের দোকান করেন। ৭৮ বছর বয়সী রঞ্জিত দাশ ছোট ভাই প্রদীপের ফাঁসির রায় নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

চট্টগ্রামে এক নারীর জমি দখলের অভিযোগ পুলিশের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন প্রদীপ দাশ। কঞ্জুরি গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায়ও অন্যের জমি দখল করেছেন প্রদীপ। ভাইদের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল না। দরিদ্র ভাইদের সহযোগিতাও করতেন না।

প্রদীপ দাশের স্ত্রী-সন্তানরা কোথা আছে, তা জানা যায়নি। চুমকি কারণের বাবা অজিত কুমার কারণ একাধিকবার বলেছেন, মেয়ে কোথায় আছেন জানেন না। প্রদীপ গ্রেপ্তার হওয়ার পর চুমকির সঙ্গে আর কথা হয়নি।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রদীপ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলছে। মামলার এজাহার অনুযায়ী, ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় স্ত্রীর নামে সম্পদ গড়েছেন প্রদীপ দাশ। চুমকি কারণ গৃহিণী। তার জ্ঞাত আয়ের উৎস নেই। তার পরও তিনি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। প্রদীপ দম্পতির বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, তথ্য গোপন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ এনেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এজাহারে বলা হয়েছে, প্রদীপের বাবা মৃত হরেন্দ্র লাল দাশ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) নিরাপত্তাপ্রহরী ছিলেন। প্রদীপ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পদে যোগ দেন ১৯৯৫ সালে। ২০০২ সাল থেকেই তার সম্পদ দৃশ্যমান হতে থাকে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমান বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ওসি প্রদীপের যাবতীয় সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে আছে।’

দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, প্রদীপ দাশ তার বেশিরভাগ সম্পদ নানা কৌশলে রেখেছেন স্ত্রীর নামে। চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরের বাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, একটি ব্যক্তিগত গাড়ি, একটি মাইক্রোবাস, ব্যাংক হিসাব এবং কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে চুমকি কারণের নামে। তার নামে চার কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে দুই কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকা। চুমকি নিজেকে মৎস্য ব্যবসায়ী দাবি করলেও তার ব্যবসার অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি দুদক।
দুদকে দাখিল করা হিসাব অনুযায়ী, পাথরঘাটার বাড়িটি চুমকিকে ২০১৩ দানপত্রের মাধ্যমে দিয়েছেন তার বাবা। তবে মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ অবৈধ সম্পদ আড়াল করতে শ্বশুরের নামে জমি কেনেন। জমি তৈরি করেন। তারপর শ্বশুরকে দিয়ে স্ত্রীর নামে বাড়িটি দান করান।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ