• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৪ পূর্বাহ্ন

দীর্ঘদিন প্যারাসিটামল সেবন ঝুঁকিপূর্ণ: গবেষণা

Md Nazim Uddin / ২৩ ভিউ টাইম
আপডেট : মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

চ্যানেল কক্স স্বাস্থ্য ডেস্ক:

উচ্চ রক্তচাপ থাকা যেসব লোকজন প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতে প্যারাসিটামল গ্রহণ করেন তাদের হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। সম্প্রতি এক গবেষণা থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের গবেষকরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে প্যারাসিটামল গ্রহণকারী রোগীদের ঝুঁকি এবং উপকারিতা সম্পর্কে চিকিৎসকদের ভালো করে চিন্তাভাবনা করা উচিত।

তবে তারা বলছেন, স্বাভাবিক ভাবে মাথাব্যথা এবং জ্বরের জন্য এ ধরনের ব্যথার ওষুধ নিরাপদ। কিন্তু তা দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। অন্যান্য গবেষকরা বলছেন, এই গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আরও বেশি লোকের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করা প্রয়োজন।

সারা বিশ্বেই ব্যথা এবং জ্বরে স্বল্পমেয়াদী প্রতিকার হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে প্যারাসিটামল। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার ক্ষেত্রেও অনেক সময় প্যারাসিটামল ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। যদিও দীর্ঘমেয়াদে এটি খুব বেশি উপকারি এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

২০১৮ সালে স্কটল্যান্ডে প্রায় ৫ লাখ মানুষের প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনকে ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ফলে দেখা যায় প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিয়েছে।

১১০ জন স্বেচ্ছাসেবকের ওপর গবেষণা চালানো হয়। এদের দুই-তৃতীয়াংশ উচ্চ রক্তচাপের জন্য এ ধরনের ওষুধ খেয়েছেন। তাদের সবাইকে দুই সপ্তাহের জন্য দিনে চারবার ১ গ্রাম করে প্যারাসিটামল খেতে বলা হয়েছিল। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার রোগীদের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ ডোজ। তারপরে আরও দুই সপ্তাহের জন্য নকল ওষুধ বা প্লাসবো দেওয়া হয়।

এডিনবার্গ ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজিস্ট অধ্যাপক জেমস ডিয়ার বলেন, ওই ট্রায়ালে দেখা গেছে এসব রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেছে। হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের পেছনে দায়ী ঝুঁকিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার রোগীদের যতটা সম্ভব কম ডোজের প্যারাসিটামল দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের বিভিন্ন রোগে ভুগছেন এমন লোকজনকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জর্জেস হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিকসের অধ্যাপক ডা. দীপেন্দর গিল বলেন, সার্কুলেশন জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় দেখা গেছে শ্বেতাঙ্গ স্কটিশ জনগোষ্ঠীর রক্তচাপ সামান্য কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এ বিষয়ে এখনও অনেক কিছুই জানা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে প্যারাসিটামলের ব্যবহার রক্তচাপের বৃদ্ধি বেশি সময় ধরে অব্যাহত রাখে কি না তা স্পষ্ট নয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বড় একটি গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদী প্যারাসিটামলের ব্যবহার এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধির মধ্যে যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছিল। তবে একটি ঘটনার জন্য অন্যটি ঘটেছে কি না তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করা যায়নি।

প্যারাসিটামল ঠিক কীভাবে রক্তচাপ বাড়াচ্ছে তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি এডিনবার্গের গবেষকরা। কিন্তু গবেষণার ফলাফলের কারণে দীর্ঘমেয়াদী প্যারাসিটামল ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে আবারও ভেবে দেখার তাগিদ দেখা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই গবেষণায় অর্থ যোগান দেওয়া ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন বলছে, যে কোনো ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমনকি প্যারাসিটামলের মতো তুলনামূলক ক্ষতিকর নয় এমন কোনো ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও চিকিৎসক এবং রোগীদের পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের ডা. রিচার্ড ফ্রান্সিস বলেন, স্বাস্থ্যবান এবং সাধারণ রক্তচাপের লোকজনের ওপর আরও ব্যাপকভাবে প্যারাসিটামল ব্যবহার করার ঝুঁকি এবং সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করা প্রয়োজন।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ