• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১২ অপরাহ্ন

স্মার্টফোন নেই নুয়েলের, ফজর পড়ে শুরু করেন কোরআন তেলাওয়াত

চ্যানেল কক্স ডেস্ক / ২২ ভিউ টাইম
আপডেট : বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের অধীনে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র নাহনুল কবির নুয়েল। ভর্তি পরীক্ষায় ৯৮ নম্বরের উত্তর লিখে ৯৬ দশমিক ৫ পেয়ে প্রথম হয়েছেন তিনি।

নুয়েলের বাবা চাঁদপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আনোয়ারুল কবির। তার মা মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নাজমুন নাহার। কর্মসূত্রে বাবা-মা দু’জনেই থাকতেন ফরিদপুরের বাইরে। ২০১৯ সাল হতে ফরিদপুরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন নুয়েল।

সামর্থ্যবান বাবা-মার স্বাবলম্বী পরিবারের সন্তান হলেও খুবই ছিমছাম পরিচ্ছন্ন ও সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত তিনি। নিয়মানুবর্তিতা ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের মধ্য দিয়েই নিজেকে দেশসেরা হিসেবে গড়ে তোলেন নিজেকে।

নুয়েলের বাবা প্রকৌশলী আনোয়ারুল কবির জানান, ২০০২ সালে খুলনায় জন্ম নুয়েলের। প্রাথমিকের পাঠ শেষ করেছে খুলনার রোটারী স্কুলে। ২০১২ সালে তিনি খুলনা থেকে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। নুয়েল ভর্তি হয় ফরিদপুর জেলা স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ফাইভ পেয়ে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হয় সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মানবিক বিভাগে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাইবোনের মধ্যে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে কিন্তু কেউ জুডিশিয়াল সার্ভিসে নেই। এজন্য আমাদের মতো নুয়েলেরও ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে সে এই লাইনে পড়াশুনা করবে। সে যেন বড় হয়ে জজ হতে পারে এটিই আমরা চেয়ে আসছি। এ কারণেই বিজ্ঞান বিভাগ ছেড়ে এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে ভর্তি। এইচএসসি পাশ করার পর সে পিইউবিতে (দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ) পরীক্ষা দিয়েও ফার্স্ট হয়। এখনো সে বিইউপিতে (ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস) ভর্তি আছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ফরিদপুরে থাকাকালে স্কুলের বাইরে নুয়েলকে বাসায় আমিই পড়াতাম। তবে আমি চলে আসার পর ওর ডিপার্টমেন্টের একজন হেডের কাছে পড়তো। পড়াশুনার বাইরে নুয়েলের অন্য কোনো আকর্ষণ ছিল না। ওর ব্যক্তিগত কোনো চাহিদা ছিল না। ১০০ টাকার একটি পাঞ্জাবি দিলে তাতেই খুশি।’

শহরের চাঁদমারিতে একটি চারতলা ভবনের তৃতীয় তলায় ভাড়া বাসায় থাকতেন নুয়েলের পরিবার। বাবা-মা দু’জনেই চাকরিসূত্রে বাইরে থাকায় ২০১৮ সালের পর একাই থাকতে হতো থাকে। করোনার কারণে ফরিদপুর ছাড়তেও পারছিলেন না তিনি। পরীক্ষা আজকে হবে, কালকে হবে- এমনি চলছিল দীর্ঘদিন।

নুয়েলের প্রতিদিনের রুটিনের বিষয়ে প্রকৌশলী আনোয়ারুল কবির বলেন, খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায়ের পর কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হতো তার দিন। আমরা ওকে সেভাবেই গড়ে তুলেছি। অবশ্য মাঝেমাঝে উঠতে পারে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ ভোরেও আমি ওকে ফোন করে ঘুম থেকে তুলে দিয়েছি।’ অবশ্য আগের দিন ঢাকায় সাংবাদিকদের সাথে ইন্টারভিউ শেষে তার বাড়ি ফিরতে রাত ২টা-৩টে বেজে যায়। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ভর্তি পরীক্ষার জন্য নুয়েল তিন-চার মাস কোচিং করেছে ঢাকার একটি কোচিং সেন্টারে। তবে স্কুলজীবনে তার কোনো টিউটর ছিল না।

নুয়েলের মা নাজমুন নাহার বলেন, ‘আমার ছেলেটি ছোটবেলা থেকেই খুব শান্তশিষ্ট। পড়ালেখার প্রতিই ওর সব থেকে বেশি আগ্রহ। ওর বাবার ইচ্ছা ও আইন বিষয়ে পড়ালেখা করবে। তার বাবা ইঞ্জিনিয়ার, আমি কৃষিবিদ। তাই চেয়েছি, ছেলে আইন ও বিচার বিভাগে প্রতিষ্ঠিত হোক।’

জানা গেছে, ২০০২ সালে ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন নাহানুল। তার বাবার বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের ভাবোখালী ইউনিয়নের ঘাঘড়া গ্রামে।

ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী নাহনুল কবির নুয়েলের সাফল্যে গর্বিত কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অসীম কুমার সাহা বলেন, ‘নুয়েল মেধাবী ছাত্র। এজন্য তাকে আলাদাভাবে চিনতাম। আমরা তার সাফল্যে খুবই আনন্দিত। সে শুধু নিজেরই নয়, আমাদের কলেজের জন্যও গৌরব এনে দিয়েছে। ঢাকার বাইরের কলেজগুলোতেও যে সেরা ছাত্র থাকতে পারে সেটি তার মধ্য দিয়ে আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। তার এ সাফল্যের খবর শুনে আমি ফোন করে তার বাবা-মাকেও অভিনন্দন জানিয়েছি।’


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ