• বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৯:৫০ অপরাহ্ন

হাতিরঝিল থানায় আসামির মৃত্যু, দুই পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

ডেক্স নিউজ / ২০ ভিউ টাইম
আপডেট : শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০২২

রাজধানীর হাতিরঝিল থানা পুলিশের হেফাজতে রুম্মন শেখ সুমন (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার পুলিশ চুরির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গভীর রাতে পরনের ট্রাউচার খুলে ভেন্টিলেটারের রডের সঙ্গে গলায় জড়িয়ে আত্মহত্যা করেন সুমন। থানা সিসিটিভি ফুটেজে এই ফাঁসের দৃশ্য ধরা পড়েছে।
এ ঘটনায় আজ শনিবারই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

শনিবার বিকেলে সুমনের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে হাতিরঝিল থানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। তাঁরা বলছেন, থানা হেফাজতে আত্মহত্যা করার দায়-দায়িত্ব পুলিশের। দায়িত্বে চরম অবহেলার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। সুমনের মৃত্যুর জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বিচারের দাবি করেন তাঁরা।

পুলিশের তেজগাও বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক বলেন, শুক্রবার রাতে দায়িত্বে থাকা ডিউটি অফিসার এসআই হেমায়েত হোসেন ও সেন্ট্রি মো. জাকারিয়াকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানতে চাইলে হাতিরঝিল থানার ওসি আব্দুর রশিদ বলেন, একটি কম্পানির ৫৩ লাখ টাকা চুরির মামলায় মহানগর প্রকল্প এলাকা থেকে শুক্রবার সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাত সাড়ে ৩টার দিকে সে ট্রাউজার খুলে ভেন্টিলেটারের রডের সঙ্গে বেধে গলায় ফাঁস দেয়। এই দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, থানায় যেসব পুলিশ সদস্য ডিউটি করেন, তাদের হাজতখানায় আসামি দেখভাল করার কথা। আসামি ভেতরে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাচ্ছে কি-না, সেটিও দেখার দায়িত্ব তাদের।

সুমনের স্বজনরা জানান, তার বাসা পশ্চিম রামপুরার ওয়াপদা রোডে। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী জান্নাত ও সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তিনি। গত বছরে তার মা মারা যায়। শুক্রবার বিকেলে মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ওয়াপদা রোডের বাসায় মিলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন সুমন। বিকেল ৪টার দিকে হাতিরঝিল থানা পুলিশ চুরি মামলায় তাকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। থানা হাজতখানায় রেখে দেওয়া হয় তাকে।

সুমনের আত্মীয় সোহেল আহমেদ বলেন, শনিবার থানা থেকে তাদের জানানো হয়, সুমন আত্মহত্যা করেছেন। তারা থানায় আসার পর ওসি তাদের হাজতখানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখিয়েছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, সুমন হাজতখানায় শুয়ে ছিলেন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে উঠে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখছেন, কেউ জেগে আছেন কি-না। এরপর নিজের পরনের ট্রাউজার খুলে পাশের দেওয়ালের উপরে লোহার রডের সঙ্গে গলায় বেঁধে ঝুলে পড়েন।

সোহেল আহমেদ বলেন, ‘সুমন অপরাধী হলে আইনের মাধ্যমে তার শাস্তি হোক, নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু থানা হাজতে মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা ডিউটিতে ছিলেন, কী করেছেন তারা? তাদের দায়িত্বে অবহেলায় সুমন আত্মহননের সুযোগ পেয়েছেন। ’ পুলিশ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শনিবার দুপুরে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে এলাকাবাসী ও স্বজনরা বিকেলে থানার সামনে ভিড় করেন। এসময় তারা বিক্ষোভ করে অবহেলায় দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিচার চান। পরে পুলিশ তাদের আশ্বাস দিয়ে সরিয়ে দেয়।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ