• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন

বাবার লাশ টুকরো করা ছেলে গ্রেফতার, কাটা মাথার খোঁজে অভিযান

ডেক্স নিউজ / ২৪ ভিউ টাইম
আপডেট : শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৩

বদলে ফেলেছিলেন নাম-ঠিকানা। বেছে নিয়েছিলেন শ্রমিকের পেশা। ডিজিটাল ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন। এরপরও শেষ রক্ষা হলো না চট্টগ্রামে বাবাকে খুনের পর লাশ কেটে টুকরো টুকরো করা সেই ছেলে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরের (৩০)। শুক্রবার রাতে ঢাকার হাজারীবাগের একটি ট্যানারি থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন চট্টগ্রামের (পিবিআই) একটি টিম।

শনিবার সকাল থেকে পতেঙ্গা থানার ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় তাকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। বাবার কাটা মাথা উদ্ধারে দুপুর ২টা পর্যন্ত নানা জায়গায় নানা কৌশলে তল্লাশি করা হয় কিন্তু কোথাও সেই মাথার খোঁজ পায়নি পিবিআই।

এর আগে পিবিআই সফিকুরের মা ছেনোয়ারা বেগম, বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান ও সফিকুরের স্ত্রী আনারকলিকে (২৪) গ্রেফতার করেছিল। খুনের শিকার হাসান আলী চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কাথারিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলী গ্রামের সাহাব মিয়ার ছেলে।

পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাবাকে খুনের পর পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে নাম-পরিচয় গোপন করে একটি কারখানায় চাকরি নিয়েছিলেন গ্রেফতার সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীর। নাম পাল্টে রেখেছিলেন সুমন। তার ঠিকানা উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলা। গ্রেফতার এড়াতে যেকোনো ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন। অর্থাৎ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি; যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে খুঁজে না পায়।

বৃহস্পতিবার থেকে টানা ৩৬ ঘণ্টা অভিযান পরিচালনা করে পিবিআই। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে ঢাকার হাজারীবাগের একটি কারখানা থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পিবিআই।

শনিবার বিকালে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালত পাঠান। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেব শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান।

গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে পতেঙ্গা থানার বোট ক্লাবের অদূরে ১২ নম্বর গেট এলাকার একটি ট্রলি ব্যাগ থেকে মানবদেহের আটটি খণ্ড উদ্ধার করে পুলিশ। ভিকটিমের মাথা ও শরীরের কিছু অংশ ছিল না। ট্রলি ব্যাগে ছিল মানব শরীরের দুটি হাত, দুটি পা, কনুই থেকে কাঁধ এবং হাঁটু থেকে উরু পর্যন্ত অংশ। এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানার এসআই আব্দুল কাদির বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় বাবার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় ছোট ছেলে সফিকুরের স্ত্রী আনারকলিকে। পরদিন আনারকলিকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের নির্দেশে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই।

মঙ্গলবার আনারকলি আদালতে জবানবন্দি দেন। পিবিআইয়ের পরিদর্শক ইলিয়াস খান যুগান্তরকে বলেন, আমাদের কাছে সফিকুরের ছবি ছিল। একপর্যায়ে আমরা হাজারীবাগের ট্যানারিতে তার অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত হই। গ্রেফতারের সময় তিনি নিজেকে সুমন এবং বাড়ি মীরসরাই উপজেলায় বলে পরিচয় দেন; কিন্তু ছবি-এনআইডি দেখানোর পর নিজেকে আর আড়াল করতে পারেননি। পরে শনিবার তাকে নিয়ে পতেঙ্গা থানার ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু খণ্ডিত মাথার হদিস মেলেনি। তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

গত ২০ সেপ্টেম্বর পতেঙ্গা থানার আকমল আলী রোডে ছোট ছেলের বাসায় কৌশলে ডেকে এনে দুই ছেলে মিলে হাসান আলীকে হাত-পা বেঁধে হত্যা করে। এরপর তার হাত ও পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে আট টুকরো করে। পরে ট্রলি ব্যাগে করে আট টুকরো, বস্তায় দেহ এবং স্কুল ব্যাগে মাথা ভরে ১০ টুকরো ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয় তারা। তাদের পিতাকে হত্যা করতে সহযোগিতা করেন ছোট ছেলে সফিকুরের স্ত্রী আনারকলি। হাসান আলীর লাশ টুকরো করে ধামাচাপা, বস্তায় ভরতে নিজের ট্রলি ব্যাগ ও স্কুল ব্যাগ এগিয়ে দেন কলি। এমনকি লাশ ফেলার সময় স্বামীর সঙ্গে যান পতেঙ্গা ১২ নম্বর ঘাট এলাকায়। নিজ হাতেই নিজের স্কুল ব্যাগে বহন করেছিলেন শ্বশুরের কাটা মাথা। এর আগে হাসান আলীর বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান এবং ছোট ছেলের স্ত্রী আনারকলি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ