• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৫ অপরাহ্ন

আগামী বাজেটে বাড়বে সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা

ডেস্ক নিউজ / ১৪ ভিউ টাইম
আপডেট : সোমবার, ৯ মে, ২০২২

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের ব্যাংকঋণনির্ভরতা বাড়বে। ঘাটতি বাজেট পূরণে ব্যাংক থেকে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিতে হবে সরকারকে। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৮.৬০ শতাংশ বেশি। মূলত বাড়তি ভর্তুকি ব্যয়ের চাপ, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা ও সুদ পরিশোধ করতে সরকারকে ব্যাংক খাতের দিকে বেশি ঝুঁকতে হবে।
সূত্র মতে, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছয় লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন। এটি মোট জিডিপির ১৫.৪ শতাংশ। আর মোট বাজেট বা ব্যয়ের বিপরীতে আয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।

আয়-ব্যয়ের মাঝখানে বড় যে ‘গ্যাপ’ সেটাই ঘাটতি। নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫.৫৫ শতাংশ।

ঘাটতি বাজেট করতে বাংলাদেশে সব সময় ‘গোল্ডেন ফাইভ রুলস’ অনুসরণ করা হয়। এই রুলস বা নিয়ম অনুযায়ী ঘাটতি বাজেট সব সময় জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়। নিয়ম মেনে এবারও ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হচ্ছে।

সরকার দুই উপায়ে ঘাটতি মেটায়। একটি অভ্যন্তরীণ, অন্যটি বৈদেশিক উৎস। অভ্যন্তরীণ উৎসর মধ্যে আবার ব্যাংক খাত, সঞ্চয়পত্র এবং অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নেওয়া হয়।
অভ্যন্তরীণ উৎস : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, সারসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে। ফলে বাড়ছে আমদানি ব্যয়ও। এর বিপরীতে সেভাবে রপ্তানি আয় বাড়ছে না। এসব খাতে ভর্তুকি দেওয়ার কারণে ব্যয়ের চাপ বাড়ছে। ফলে সরকার ব্যাংকমুখী হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের সাড়ে ৯ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত) ব্যাংক খাত থেকে সরকার ১৩ হাজার ৮৪৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে, গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল পাঁচ হাজার ৪৫৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শিগগিরই শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্য ও কাঁচামালের বাড়তি দাম আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে জুলাই থেকে শুরু হতে চলা নতুন অর্থবছরে জ্বালানি তেল ও সারের মতো খাতে বাড়বে ভর্তুকির বিল। সরকার রাজস্ব আয় দিয়ে বাড়তি এ ব্যয়ের চাপ সামলাতে পারবে না। ফলে অর্থ মন্ত্রণালয়কে ব্যাংকিং খাত থেকেই ঋণ নিতে হবে।

বাড়তি ভর্তুকি ছাড়াও সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে অর্থের জোগানও সরকারের মাথাব্যথার আরেকটি কারণ। ২০১১-১২ অর্থবছরে যেখানে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ ছিল ২১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। ফরাসউদ্দিন কমিশনের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের পর সেখানে প্রতি অর্থবছরে বেতন-ভাতায় খরচ বেড়েছে। আগামী বাজেটে এ খাতে ৭৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি চলতি অর্থবছরের চেয়ে ছয় হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা বেশি। বাড়তি এ ব্যয় মেটাতেও সরকারকে ব্যাংকমুখী হতে হবে।
প্রতি অর্থবছরেই সরকারকে সুদ পরিশোধে বিশাল অঙ্কের বরাদ্দ রাখতে হয়। আগামী অর্থবছরেও সুদ পরিশোধে ৮০ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতের ব্যয় মেটাতেও সরকারের ভরসাস্থল সেই ব্যাংক খাত।

এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটাতে আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে এক লাখ ৪১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে এক লাখ এক হাজার ৮১৮ কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে ২৫ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা।

এ ছাড়া আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে সরকার ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে।

বিদেশি উৎস : আগামী বাজেটে বিদেশি উৎস থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। স্বল্প সুদ ও সহজ শর্তের কারণে আগামী বাজেটে এ খাতে বেশি ঝুঁকছে সরকার। নতুন বাজেটে বিদেশি উৎস থেকে এক লাখ তিন হাজার ৪৬ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে অর্থ বিভাগ। চলতি বাজেটে এক লাখ এক হাজার ২২৮ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া আছে।
বাজেট ঘাটতির বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজেটে সব সময় কিছু বিষয় নিয়ে লুকোচুরি করা হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে ঘাটতি কম দেখানো হয়। করোনার আঘাতের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি অস্থির সময় পার করছে। ফলে এখন ঘাটতি বাড়লেও সমস্যা নেই। তাই সরকারের উচিত ঘাটতি নিয়ে লুকোচুরি না করা। তবে ব্যাংকের তারল্য সংকটের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ’

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন একটি জটিল সময় চলছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে। এতে ব্যাংকে চাপ বাড়ছে। আবার ভর্তুকিতে রয়েছে বাড়তি চাপ। এ পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা বাড়বে—এটা স্বাভাবিক। ভর্তুকি বাড়িয়ে জনগণকে স্বস্তি দেওয়ার কৌশল ঠিক আছে। সরকারের কাছে আপাতত কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু ব্যাংকঋণের ক্ষেত্রে ঋণ ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে।


আরো বিভন্ন বিভাগের নিউজ